ইরান-যুক্তরাষ্ট্র।যেখানে খেলাধুলার চেয়ে রাজনীতিই বেশি
পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আজ জিততে হবে এবং ইরানের কাছে ড্র হলেও সুযোগ থাকবে। এটি গ্রুপ ‘বি’ এর সরল সংখ্যা। তবে বিশ্বকাপের কথা এলে তেহরান আর ওয়াশিংটনের হিসেবটা যদি শুধু ফুটবল দিয়েই করা হয়, মনে হয় একটা ফাঁক থাকবে! আল থুমামায় আজ রাতের দুই দলের মধ্যকার ম্যাচের বেশির ভাগই উত্তপ্ত রাজনীতির তুঙ্গে। যা শুরু হয় ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগে। ইরান অভিযোগ করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জাতীয় পতাকার একটি বিকৃত পোস্ট করেছে। ফিফার কাছে অফিসিয়াল পিটিশনে, তারা আজকের ম্যাচের পাশাপাশি অন্য ৯টি ম্যাচ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বহিষ্কারের অনুরোধ করেছে।
আসলে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কয়েক দশকের পুরনো। সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ইরানের সঙ্গে বৈরিতা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে বলে ক্ষুব্ধ বাইডেন। এদিকে ইরানে পোশাক বিতর্কের জেরে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যু এবং এর পর দেশজুড়ে নারী আন্দোলনের ঢেউ। ইরান সরকার মনে করে এই আন্দোলনের পেছনে আমেরিকার হাত রয়েছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র তা স্বীকার করেছে ঘোষণা দিয়ে। ইরানের স্টেডিয়ামে নারীরা ম্যাচ দেখতে না পারার কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপ থেকে ইরানকে বাদ দেওয়ার জন্য ফিফার কাছে আবেদন করেছিল। ফিফার চাপে দেশটি চলতি বছরের অক্টোবরে স্টেডিয়ামে নারীদের লিগ ফুটবল ম্যাচ দেখার অনুমতি দেয়। ইরানে নারীদের খেলা দেখার ওপর ৪৩ বছরের নিষেধাজ্ঞার অবসান হয়েছে।
রাজনীতির এই ঢেউ বিশ্বকাপেও আঘাত হেনেছে। স্টেডিয়ামের প্রবেশ পথে ভক্তদের ব্যাগ নানাভাবে তল্লাশি করা হলেও ইরানের ম্যাচের সময় গ্যালারিতে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ লেখা পোস্টার দেখা যায়। ম্যাচে ইরানের খেলোয়াড়রা জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ার পরও অনেক কথা হয়। এমনকি আজকের ম্যাচেও মাঠে বিতর্কিত কিছু না ঘটবে বলে আশঙ্কা করছে ইরান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।
অবশ্য ইরানের পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুইরোজ খেলোয়াড়দের এসব রাজনৈতিক হাওয়া থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি নিজে বাইরে থাকতে পারেন না। জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ী জার্গেন ক্লিন্সম্যান, সাবেক আমেরিকান কোচ, ইরানের দুটি ম্যাচ দেখার পর ইরানের ফাউলিং স্টাইলকে ‘ইরানি সংস্কৃতি’ বলে উল্লেখ করেছেন। জবাবে কুইরোজ ক্লিনসম্যানের ‘শিক্ষা’ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। গতকাল ইরানের কোচ যখন আজকের ম্যাচ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন, তখনও তাকে পতাকা বিতর্কের জবাব দিতে হয়। আমেরিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের আজকের ম্যাচের পূর্বরূপের জন্য তাদের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা পতাকাটি হল ১৯৮০-এর আগের পতাকা। যেখানে সিংহ ও সূর্য ছিল প্রতীক। তেহরানের বিক্ষোভকারীরাও সেই সিংহ ও সূর্যের পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করছে।
বিষয়টিকে রাজনৈতিক উসকানি হিসেবে দেখছে তেহরান।
তবে এই বিশ্বকাপে আমেরিকান কোচ গ্রেগ বারহাল্টার মনে করেন, ফুটবলের সঙ্গে রাজনীতি মেশানো ঠিক নয়। তার মতে, ‘তিনটি দেশের কোচিংয়ের দায়িত্বে ছিলাম। একটি ম্যাচের আগে ফুটবলারদের শুধু ফুটবল থাকে; আর কিছু না. দলে রাজনীতির হাওয়া থাকবে না।’ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ওয়েলসের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করার পর গোলশূন্য ম্যাচে ফেভারিট ইংল্যান্ডকেও থামিয়ে দেয় তারা। তাই আজকের ম্যাচে অন্তত জিততে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। অন্যদিকে কিছুটা স্বস্তি নিয়েই মাঠে নামবে ইরান। ইংল্যান্ডের কাছে তাদের প্রথম ম্যাচে ৬-২ গোলে হারলেও গ্যারেথ বেলের ওয়েলস দুই গোলে জিতেছে। দলের ১৩ জন খেলোয়াড় ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলে। তাই রাজনীতির উত্তাপ আজ মাঠের লড়াইয়ে ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাপ আবার বাড়তে পারে কে জানে!