তথ্য সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর।প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি কড়া বার্তা

0

স্বাভাবিক অবসরে এক বছরেরও কম সময়ের আগে তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে সরকার। প্রায় দেড় বছর তথ্য সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তাকে অপসারণের কারণ নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চললেও স্পষ্ট কারণ জানা যায়নি। একটি দায়িত্বশীল সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে এটি কেবল তথ্য সচিব নয়, প্রশাসনের সাথে জড়িত সমস্ত কর্মকর্তাদের কাছে একটি বড় বার্তা দেওয়া হলো।

মকবুল হোসেন গত বছরের ৩১ মে তথ্য সচিব হিসেবে যোগ দেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১০ম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ১৯৯১ সালে চাকরিতে যোগ দেন। তার মেয়াদ ছিল আরও এক বছর। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে দ্বিতীয়বারের মতো একজন তথ্য সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ২০০৯ সালে, তৎকালীন তথ্য সচিব এটি এম ফজলুল করিমকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে অবমাননাকর কবিতা লেখার অভিযোগে সরকার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। তিনি সাহিত্যিক মহলে আবু করিম নামে পরিচিত ছিলেন। মকবুল হোসেনের আগের তথ্য সচিবের দায়িত্বও বেশিদিন ছিল না।

প্রেক্ষাপট আগ্রহ: মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ কয়েকজন সচিব এখন দেশের বাইরে সফরে রয়েছেন। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার দুপুরে তথ্য সচিবের বাধ্যতামূলক অবসরের খবর ছড়িয়ে পড়লে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল দেখা দেয়। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে কেন এভাবে অবসরে পাঠানো হলো তা নিয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে সবার মনে। অনেক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের ফোন করে কারণ জানতে চান।

প্রথমে কেউ কিছু বলতে পারেনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে মকবুল হোসেনের বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়ার কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে মকবুল হোসেনের নিজের মন্তব্য জানা যায়নি। একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সন্দেহজনক যোগাযোগের কারণে তথ্য সচিব মকবুল হোসেনকে অপসারণ করা হতে পারে। সূত্র জানায়, তথ্য সচিব নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের বিপরীতে একটি বেসরকারি কার্যালয়ে যাতায়াত করছিলেন। সচিবালয়ের অনেক শীর্ষ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে ওই দফতরের প্রধানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অনেক সাবেক প্রশাসন ও সরকার বিরোধী দল সেখানে যাতায়াত করে। আর এই সংযোগের কারণ সরকারের আয়নায় বড় একটি হিসেবে ধরা পড়েছে।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনের মধ্য ও জুনিয়র পর্যায়ের কিছু গ্রুপ লন্ডনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এসব খবর সরকারের কাছে আছে। তাদের মধ্যে চিহ্নিত ব্যক্তিদের ভিন্নভাবে মেসেজ করা হচ্ছে। তথ্য সচিবের বিষয়টি নিয়ে সবাইকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে যারা দ্বিধাবিভক্ত, তাদের কাছে এটা স্পষ্ট বার্তা দেবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ মকবুল হোসেন (৫৫১৪) জনস্বার্থে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্ট, ২০১৮এর ধারা ৪৫। আদেশে আরও বলা হয়েছে, ‘জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন রোববার রাতে বলেন, ‘সরকার যে সিদ্ধান্তই নেয়, আইন-কানুন মেনেই নেওয়া হয়। আইনের বাইরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। তাকে (তথ্য সচিব) ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রেও আইন অনুসরণ করা হয়েছে। এখানে কোনো প্রশ্ন নেই।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজন অনুযায়ী চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সরকার অনেক কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা তাদের মেয়াদ শেষে অবসরে যান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মেয়াদ শেষে অবসরে পাঠানো হয়। ২৫ বছর। এই সব নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছে।’

সরকারবিরোধী যোগাযোগের কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘অপসারণের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়া অন্য কোনো কারণে আমি মন্তব্য করতে পারব না।’

পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্ট, ২০১৮-এর ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘২৫ (পঁচিশ) বছর চাকরি শেষ করার পর, সরকার, জনস্বার্থে, কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই যে কোনো সময় তাকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারে।’ এই ধারায় আরও বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতি যে ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন প্রাপ্ত হবে।’

অবসরের সুবিধার বিষয়ে কী: মকবুল হোসেনের বাধ্যতামূলক অবসরের প্রজ্ঞাপনে অবসর সুবিধার কোনো উল্লেখ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *