আগুন নেভানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের অক্ষমতা
ঢাকার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন ফ্যাশন ফ্যাক্টরিতে ২০১২ সালে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন দুর্ঘটনায় ১১৭ জন শ্রমিক দগ্ধ হন। প্রাণে বাঁচতে গিয়ে আহত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক শ্রমিক। দুর্ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি বাজার শুল্কমুক্ত সুবিধা বা জিএসপি হারানোর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে। গত বছর নারায়ণগঞ্জের সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫২ শ্রমিক দগ্ধ হন। গত ৪ জুন সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সর্বশেষ উদাহরণ। দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের আগুন নেভানোর ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে এবং জাতীয় সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এত মূল্যবান জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হলেও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্টরা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সক্ষমতা বাড়াতে ১১ বছর আগে শুরু হওয়া দুই বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি। ২০১১ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বলা হয়েছিল ২০১৩ সালে প্রকল্পটি চালু করা হবে। প্রকল্পটি সময়মতো বাস্তবায়িত হলে তাজরীন, সেজান জুস কারখানা এবং সর্বশেষ সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুই বছর মেয়াদী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ১১ বছরে দুবার সংশোধন করা হয়েছিল। আগের চেয়ে বেশি, ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে। সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে খরচও। প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১৪৮ কোটি টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ১৮১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪১৯ কোটি টাকা। তৃতীয় ধাপে ২৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের মতে, যাত্রা খরচ কমার কারণ হিসেবে শেষ পর্যন্ত প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ৬টি স্টেশন।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, কেন প্রকল্পটি সময়মতো বাস্তবায়িত হয়নি তা তিনি জানেন না। তিনি প্রকল্প ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। অনেক চেষ্টা করেও প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এ প্রকল্পের বর্তমান পরিচালক লে.কর্ণেল রেজাউল করিম।
এদিকে মঙ্গলবার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে আবারও প্রকল্পটি সংশোধনের অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি কমিশনের সংশ্লিষ্ট ভৌত অবকাঠামো বিভাগ দ্বারা স্ক্রীন করা হয়েছে।
দুই বছর মেয়াদি প্রকল্প ১১ বছরেও শেষ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সচিব মামুন-আর-রশিদ বলেন, কাজগুলো আসলে খুবই জটিল। শেষ পর্যন্ত ৬টি ফায়ার স্টেশনকে প্রকল্প থেকে বাদ দিতে হয়েছে। এ কারণে এ সংশোধনীর ব্যয় আগের সংশোধনীর চেয়ে কম। সচিব বলেন, সরকার অগ্নি নিরাপত্তা থেকে জানমাল রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও প্রকল্প আসবে।