পদ্মা সেতুর টোলে বাড়বে গাড়ি ভাড়া
পদ্মা সেতুর টোলের কারণে বাস ভাড়া ১৫ থেকে ২৩ টাকা বাড়বে। বর্তমানে মাওয়া ঘাটে ফেরি পারাপারের জন্য যাত্রীপ্রতি খরচ হয় ৩০ টাকা থেকে ৪৬ টাকা। পদ্মা সেতুতে যাত্রীপ্রতি খরচ হবে ৪৫ থেকে ৬৯ টাকা।
তবে সেতুটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলার দূরত্ব কমে যাবে। টোলের কারণে ভাড়া বাড়লেও দূরত্ব কমবে। তবে শেষ পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল নেওয়ায় ভাড়া কমবে না। যানজটের দুর্ভোগ এড়াতে এক্সপ্রেসওয়ে ও ফেরির দুর্ভোগ পেছনে ফেলে পদ্মা সেতু দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে কিছুটা ভাড়া বাড়বে। এর চেয়ে মালবাহী যানবাহনের ভাড়া বাড়বে।
৩১ আসনের কম আসনবিশিষ্ট ছোট বাসগুলো পদ্মা সেতু পার হলে টোল দিতে হবে ১৪০০ টাকা। ৩১টি আসনের বেশি খরচ পড়বে দুই হাজার টাকা। তিন-এক্সেল বাসের জন্য আপনাকে ২৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। টোল বাবদ বাসের যাত্রীর পকেট থেকে কত টাকা যাবে- সে হিসাব খুবই জটিল।
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, টোলের টাকার ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। যাত্রী পিছু টোলের একটি সূত্রও রয়েছে। তার মতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগেই ভাড়া সমন্বয় করা হবে। চেয়ারম্যান বলেন, জুনের শেষে পদ্মা সেতু চালু হবে। ভবিষ্যতের সেতুর ভাড়াও জুনের মাঝামাঝি চূড়ান্ত করা হবে। পদ্মা সেতুর কারণে অনেক রুটের দূরত্ব কমে যাবে। ফলে সমন্বয়ের কারণে ভাড়া কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়লেও দূরপাল্লার ৫১ আসনের বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১.৪২ টাকা থেকে বেড়ে হয় ১.৬০ টাকা। ৫১ আসনের বাসটি সড়কে না থাকায় ৪০টি আসনের ভাড়া নির্ধারণ করে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। আসন সংখ্যা কমলে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া অনুপাতে বাড়বে। এসি বাসের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে না। থ্রি এক্সেল বাসটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ফলে পদ্মা সেতুর টোলের জন্য এসব যাত্রীর ভাড়া কত বাড়বে তা ঠিক করবেন মালিকপক্ষ।
যাত্রী প্রতি টোল নির্ধারণে গাণিতিক জটিলতা রয়েছে। বিআরটিএর ভাড়া নির্ধারণ কমিটির তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে পুনঃনির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী রাজধানীর গাবতলী টার্মিনাল থেকে চলাচলকারী বাসের ৮২ দশমিক ৫৪ শতাংশ যাত্রীর ওপর ভিত্তি করে টোল নির্ধারণ করা হয়। সায়েদাবাদ, মহাখালী ও অন্যান্য টার্মিনাল থেকে যাত্রীদের জন্য প্রতি বাসে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০টি আসন।
৩১ সিটের একটি বাসকে মাওয়ায় পদ্মা নদী পার হতে টোল দিতে হয় ৯৫০ টাকা। গাবতলী বাসে যাত্রীপ্রতি টোল দিতে হয় ৪২.২২ টাকা। আবার সায়েদাবাদ থেকে চলাচলকারী বাসের যাত্রীদের দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা ৭৪ পয়সা। এই পরিমাণ যোগ করে মোট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। পদ্মা সেতুতে গাবতলী থেকে যাত্রী প্রতি ৭২.২২ টাকা এবং অন্যান্য টার্মিনাল বাস থেকে যাত্রীপ্রতি টোল হবে ৪৫.১৮ টাকা।
৪০ সিটের একটি বাসকে ফেরি পারাপারে ১,৩৫০ টাকা টোল দিতে হয়। গাবতলী থেকে বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে যাত্রীপ্রতি ৪৮.৫৫ টাকা। অন্যান্য টার্মিনাল থেকে বাসের ভাড়া ৩৩.৬৫ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে গাবতলী বাসের ভাড়া ৮.৯৮ টাকা এবং অন্যান্য টার্মিনাল থেকে ৪০ আসনের বাসের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিআরটিএর বর্তমান ভাড়া তালিকা অনুযায়ী ঢাকার গাবতলী থেকে যশোরের দূরত্ব আড়াইশ কিলোমিটার। ৪০ সিটের বাসের ভাড়া ৫৭৩ টাকা ৭৫ পয়সা। পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি টোল ১৯৫০ টাকা। যাত্রী প্রতি টোল ৬৭ টাকা সহ চূড়ান্ত ভাড়া ৬৪১ টাকা।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, টোলের হারের ওপর ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। পদ্মা সেতুর টোল ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করতে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে চলাচলকারী বাসগুলো ভবিষ্যতে পদ্মা সেতুতে চলাচল করলে দূরত্ব কমলে ভাড়া কমাতে কোনো আপত্তি নেই।