সুরমা নদীর নাব্য সংকটে সিলেটে বন্যা ও জলাবদ্ধতা
হাওরে বন্যায় পানিপ্রবাহ ব্যাহত, দ্রুত নদী খননের আহ্বান
সিলেটে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত কমলেও নদীর পানি বাড়ছে; বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে। সিলেটে সর্বশেষ বড় বন্যা ২০০৪ সালে হলেও নগরীতে ক্ষয়ক্ষতি কম ছিল। কেউ কেউ মনে করেন, এ বছরের দুর্যোগ ১৯৮ সালের চেয়েও বড়। এমন বন্যা আগে কখনো দেখেনি শহরে। নজিরবিহীন এই বন্যা ও জলাবদ্ধতার জন্য সুরমা নদীর নাব্য সংকট দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিএসআইসি) নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কয়েক বছর ধরে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও এবার সুফল পাননি নাগরিকরা। নগরীতে বন্যার জন্য সুরমা নদীর নাব্য সংকট চিহ্নিত করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সিসিকের প্রকৌশলীরা। তবে অপরিকল্পিতভাবে খাল উদ্ধার, ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারের ফলে সুরমার পানি নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে পরিবেশবাদীরা মনে করেন। সিসিকের একজন প্রকৌশলীও স্বীকার করেছেন, সুরমা নদীর পানি নগরীর বিশাল এলাকা প্লাবিত করেছে।
শহর ছাড়াও সদর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ আটকা পড়েছে। এবার উপজেলা পর্যায়ে বন্যার তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জলাধারসহ নিচু এলাকা ভরাট করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করার জন্য হাওরে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে বলে সতর্ক করছেন পরিবেশবাদীরা। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এসেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন পরিবেশবাদীদের সুরে সুরমা নদী দ্রুত খননের কথাও বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বন্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে সুরমা খননের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সিলেটের বন্যার পানি নিয়েও ভাবছেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালের পর এটাই সর্বোচ্চ পাহাড়ি ঢল। সিলেটে অতিবৃষ্টির কারণে সাম্প্রতিক বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষ শুধু শহরেই আটকা পড়েছে।
স্থানীয়দের মতে, স্বাভাবিক প্রবাহের ধর্ম অনুযায়ী পাহাড়ি ঢলের শেষ গন্তব্য সিলেট-সুনামগঞ্জের হাওর, তবে সেগুলো এখনো পুরোপুরি পানিতে ভরা নয়। বন্যার পানি অলৌকিকভাবে নিচের দিকে প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় কৃষক সেলিম আকঞ্জি জানান, ৫০ বছরেও এত পানি হাওরে দেখিনি। তবে সিলেট শহর বা সুনামগঞ্জ শহরের বন্যার তুলনায় হাওরে পানির উচ্চতা এখনো কম বলে জানান তিনি।
এ মৌসুমে সব সময়ই বন্যার ধরন ঢল উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের মনেও প্রশ্ন জাগে। মন্ত্রী বলেন, ছোটবেলায় কিন্তু পানি আটকে ছিল না, চলে যাবে। কারণ সে সময় শহরে অনেক পুকুর ও দীঘি ছিল। প্রতিটি বাড়ির সামনে একটি পুকুর ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘির শহর। কিন্তু এখন শহরের ভেতরে সব পুকুর ভরাট করে বড় বড় ভবন তৈরি করা হয়েছে। হাওরগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়া মূল নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খালি মাঠ পূর্ণ। এ কারণে পানি নামতে পারছে না। এটা সিলেটবাসীর জন্য আতঙ্কের কারণ।