তেঁতুলতলার মাঠ আসলে কার
রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি করে খেলার মাঠ বা পার্ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মাথায় রেখে ঢাকার দুই সিটি মেয়রও নগর পরিকল্পনা করছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে রাজধানীর তেঁতুলতলা মাঠে কলাবাগান থানা নির্মাণের উদ্যোগ নগরবাসীর মনে ছাপ রেখে গেছে। মাঠ বাঁচাতে প্রতিদিনই চলছে আন্দোলন-ক্ষোভ-বিক্ষোভ।
মাঠ সুরক্ষা কর্মীরা বলছেন, কোনোভাবেই খেলার মাঠে থানা ভবন হতে দেওয়া হবে না। সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে থানায় গ্রেপ্তার করায় মাঠ রক্ষার আন্দোলন গতি পেয়েছে। জমির মালিকানা ও থানা বরাদ্দ নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। জায়গাটা একটা মাঠ, কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়; তা নিয়েও চলছে বিতর্ক।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মাঠের সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ নেই। তারা মাঠের মালিক নয়। থানা ভবন নির্মাণের জন্যও বরাদ্দ দেয়নি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। থানা ভবনের জন্য পুলিশ বরাদ্দ দাবি করলেও তারা কোনো দালিলিক প্রমাণ প্রকাশ করেনি। সব মিলিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতার মাহমুদ বলেন, ‘আমি যতদূর জানি জায়গাটি একজন বিহারীর। ওই এলাকায় ৩০,০০০ মানুষ বসবাস করে বলে জানা গেছে। তাদের জন্য কোনো মাঠ নেই। খোলা জায়গা নেই। পাঁচ হাজার মানুষের জন্য অন্তত একটি খেলার মাঠ থাকতে হবে। সে হিসেবে এলাকায় ছয়টি মাঠ থাকতে হবে। সরকার ওই মাঠটি থানার জন্য বরাদ্দ দিলেও অযৌক্তিক কাজ হতো। এমন খোলা জায়গা বা মাঠ কখনোই কোনো প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ করতে পারে না, এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
ড. আখতার মাহমুদ আরও বলেন, ‘রাজধানীতে থানার সংখ্যা বেড়েছে। মানুষ বেড়েছে। থানার জন্যও জায়গা দরকার। এটা অর্জিত বা ক্রয় করা আবশ্যক. যে শহরে মাঠ-পার্ক-খোলা জায়গার অভাব, সেখানে এভাবে খেলার মাঠ বা খোলা জায়গা বরাদ্দের সুযোগ নেই।
স্থানীয় কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি ওই জায়গাটিকে মাঠ হিসেবে দেখছি। কয়েকদিন আগে একজন এসে বলেন, মাঠ দখল করে থানা বসানো হচ্ছে। একটু বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন। এখন কোন পথে যেতে হবে? একদিকে পুলিশ, অন্যদিকে ভিড়। বিষয়টি নিয়ে আমিও বিপাকে পড়েছি। আমি বুঝতে পারছি না এটা কিভাবে হল। ‘
আন্দোলনকারীদের একজন এসএম শহীদুল্লাহ সুজা বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় কলাবাগান থানাকে থানা কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে বলেছি। আমাদের যে দেখান. পুলিশ একথা বলতেই তারা গাড়িতে তুলে নেয়। এভাবে সৈয়দা রত্না ও তার সন্তানকে গ্রেফতার করে থানায় একদিন আটক রাখা হয়।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও নেতাকর্মীরা মো. শামীম বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বিদেশে নাজমা আশিরনের সঙ্গে দেখা হয়। সে জায়গাটা আমার কাছে কম দামে বিক্রি করে সব কাগজপত্র দিয়েছে। জমির সব কাগজপত্র আমার কাছে আছে। আইন অনুযায়ী ওই জমির মালিক আমি। আপনি যদি নিতে চান তবে আপনাকে এটি আমার কাছ থেকে নিতে হবে। ‘
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি) মো. মইনুল হক আনসারী জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। বোর্ড সদস্য (পরিকল্পনা ও নকশা) বিজয় কুমার মন্ডল সঠিক ম্যাট রিপোর্ট করতে সক্ষম হবেন।