নাগালে থাকতেও ধরেনি পালানোর পর অভিযান।নিউমার্কেটে সংঘর্ষ
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের দোকানের শ্রমিকদের সংঘর্ষে মূল ভূমিকায় থাকা কয়েকজন সীমান্তে দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী ইমন বাসারকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তিনি যশোর সীমান্ত এলাকায় আত্মগোপন করে সীমান্ত পার হওয়ার সুযোগ খুঁজছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষে জড়িত আরও ছয়জনকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে ঢাকার বাইরে পুলিশ ও র্যাবের কয়েকটি পৃথক টিম অভিযান চালাচ্ছে। হামলাকারীরা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকাগুলোও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় সোমবার ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ গণিত বিভাগের অধ্যাপক অখিল বিশ্বাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাদের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, নিউমার্কেটের ঘটনায় যারা ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত হবে, তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, হেলমেট পরে হামলায় জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
সংঘর্ষে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজনের নামও নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন কাইয়ুম, কাওসার হামিদ, শাহীন সাদেক মির্জা, জাকির ও সুজন ইসলাম।
ঢাকা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর মতে, ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত ছিল নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করা যারা ‘জ্বালানি’ সরবরাহ করেছিল। হেলমেট পরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সামনে বা ভেতরে হামলাকারী ও ভাঙচুরকারীদের চিহ্নিত করতে পুলিশও ধীরগতিতে এগোয়। তবে এরই মধ্যে হামলাকারীদের অনেকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরপর তারা ঢাকা কলেজের হল ও ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুরু থেকেই হামলাকারীদের ধরতে তৎপর থাকলে কেউ ধামাচাপা দেওয়ার সুযোগ পেত না। হামলাকারীদের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ছিল। তারা এখন তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে এবং ফেসবুক নিষ্ক্রিয় করে আত্মগোপনে চলে গেছে।
এদিকে হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না করে ঢাকা কলেজের কোনো শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন যে হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। তারা ঘটনার সময় মিডিয়া কর্মীদের তোলা সিসিটিভি ফুটেজ এবং ফুটেজও বিশ্লেষণ করছে। ঢাকা কলেজের বর্তমান ও সাম্প্রতিক শিক্ষার্থীদের ফোন করে হামলাকারীদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দুটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। একটি হলো নৃশংস হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা। আরেকটি হলো, যারা দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণ তাদের খুঁজে বের করা।
বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের সাম্প্রতিক প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা জানান, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বারবার সংঘর্ষ হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই এর সমাধান হয়েছে। তবে ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে পরদিন পর্যন্ত চলে। যে প্রক্রিয়ায় পরের দিন সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। দ্বিতীয় দিনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন বাইরের অনেক অচেনা মুখ। এ সময় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে হেলমেট পরা বহিরাগতরা ছিল।
ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঈনুল হোসেন বলেন, শনাক্ত হওয়া কোনো শিক্ষার্থীর বিষয়ে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে কোনো বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে তা করা হবে। আলামত উদ্ধারের জন্য গত রোববার ওই ছাত্রাবাসে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তারা একজনকে নিয়ে গেলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়। তবে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
সোমবার ঢাকা কলেজে গিয়ে দেখি নিস্তব্ধ নীরবতা। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যেসব ব্লকে বসবাস করত সেগুলো প্রায় সম্পূর্ণ ফাঁকা। গত রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজে ডিবির একটি দল অভিযানে গেলে ক্যাম্পাসে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির সদস্য জহির হাসান ওরফে জুয়েলকে কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ থেকে ধরে নিয়ে যায়। কক্ষ থেকে দুটি মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়েছে। ওই কক্ষে থাকতেন নাহিদ হোসেন হত্যা মামলার আসামি ইমন। তবে অপারেশনের সময় ইমন কক্ষে ছিলেন না।