দর্জিদের দম ফেলার ফুরসত নেই
পছন্দের ডিজাইন এবং নিখুঁত ফিটিং বরাবরের মতো এবারও তৈরি পোশাকের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। রমজানের শুরু থেকেই কাপড় কিনতে ক্রেতারা ভিড় করেছেন ‘গেজ ক্লথ’ মার্কেটে। জামাকাপড় কেনার পর রং ও আকৃতি মিলিয়ে লেইসও কিনেছেন অনেকে। চাঁদনী চক, বসুন্ধরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন দর্জি বাড়িগুলো এরই মধ্যে কাপড়ের অর্ডার দিয়েছে। তবে কারিগররা বলেছেন, তারা ২০ দিনের মধ্যে কাপড়ের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেবেন। তাই ভিড় এড়াতে অনেকেই ছুটছেন দর্জি বাড়ির দিকে।
এদিকে, করোনা মহামারিতে দুই বছর ধরে টার্গেট অনুযায়ী অর্ডার পাননি দর্জিরা। এ বছর সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দিনরাত কাজ করছেন কারিগররা। পোশাকের কাটিং ও ডিজাইনেও ব্যস্ত তারা।
সব কাপড়ই থ্রি-পিসে থাকায় সাধারণত বাড়তি কাপড় কেনার দরকার নেই। তবে অনেকেই পছন্দের কাপড় কিনে পোশাক তৈরি করতে চান। রয়েছে মানানসই স্কার্ফ ও সালোয়ার। ইসলামপুরের পাইকারি বাজার, নিউমার্কেট ও বঙ্গ মার্কেটে দেশীয় সুতি কাপড়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। তরুণীরা সেদিকে খুব ঝুঁকে পড়ে। তবে পছন্দের তালিকায় সবার আগে রয়েছে কাতান কাপড়।
সরেজমিনে দেখা যায়, চৈত্রের গরমেও ইসলামপুর, গাউছিয়া, নিউমার্কেট ও বসুন্ধরা ইয়ার্ডের দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড়। গজ কাপড় কেনার পর তারা ভিড় করেছেন চাঁদনী চকের দর্জি বাড়িতে। দোকানের ওস্তাদ দর্জিরাও কাপড়ের অর্ডার নিতে ব্যস্ত। তাদের দম ধরার সময় নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানকার দর্জি বাড়িতে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার পোশাক সেলাই করা হচ্ছে। নিউমার্কেটের একটি দর্জির দোকানে নকশা দেখাচ্ছিলেন ধানমন্ডির বাসিন্দা নুফাইসা। তিনি বলেন, ঈদ মানে উৎসবের রঙে নিজেকে রাঙানো। প্রতি বছর নতুন ডিজাইন আসে। তাই রেডিমেড কাপড় না কিনে প্রতিবারের মতো এবারও নিজের ডিজাইনের পোশাক পরব। নিজের ডিজাইন করা জামাকাপড় সাজানোর মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ আছে। চাঁদনী চকের তৃতীয় তলায় দর্জির দোকানে গিয়ে দেখা যায় মেয়েদের উপচে পড়া ভিড়। তাদের কেউ কেউ নিয়মিত ক্রেতা। ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা এখানে এসেছেন। ইডেন মহিলা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী সুমি জানান, কলেজে পড়ার সময় তিনি চাঁদনী চকের একটি দর্জির দোকান থেকে কাপড় তৈরি করতেন। এখানকার কারিগরদের কাজ নিখুঁত। তবে এখানকার কারিগরদের মজুরি অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি। এদিকে মোবাইল থেকে কাটিং মাস্টারকে সালোয়ার-কামিজ ও ব্লাউজের ডিজাইন দেখাতে ব্যস্ত অনেকেই। এখানকার কাটিং মাস্টাররা জানান, গরমের কারণে এখন সুতি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে।
চাঁদনী চকের বিপরীত পাশে নিউমার্কেটের মসজিদ সংলগ্ন দর্জির দোকানের ওস্তাদ কবির বলেন, এবার কাজের চাপ বেশি। দিনরাত পরিশ্রম করছেন কারিগররা। তবে ২০ দিনের রোজার পর অর্ডার নেওয়া হবে না। ‘মায়ের দোয়া’ বললেন দোকানের দর্জি। মাসুদ বলেন, প্রতিদিন এক হাজার থেকে পনের শতাধিক পোশাকের অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। প্রতি পিস পোশাকের জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। এর কারণ পোশাক তৈরির অন্যান্য উপকরণ যেমন বোতাম, লেইস, সুতার দাম বেড়েছে। এখানে সাধারণ সালোয়ার-কামিজ ৫০০ টাকা, জাল দেওয়া শার্ট ৮৫০ টাকা, সাধারণ ব্লাউজ ৭০০ টাকা ।কেউ লেহেঙ্গা বা ঘাগরা বানাতে চাইলে ডিজাইন অনুযায়ী মজুরি দুই থেকে তিন হাজার টাকা। তবে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে চাঁদনী চকের চেয়ে প্রতিটি পোশাকে ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।