আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালু হতে পারে,উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়
প্রায় এক শতাব্দী ধরে বন্ধ থাকা আবাসিক খাতে বৈধ গ্যাস সংযোগ আবার চালু হতে পারে। একই সময়ে স্টোভ বা বার্নার এক্সটেনশন অনুমোদিত হতে পারে। তিতাস গ্যাস কোম্পানির মাধ্যমে পেট্রোবাংলার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে এমন প্রস্তাব আসে। বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় এক শতাব্দী ধরে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ বৈধভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। মূলত কয়েকজন এলপিজি (বোতলজাত গ্যাস সিলিন্ডার) ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রকৃতপক্ষে আইনি উপায়ে বন্ধ থাকলেও অধিকাংশ গ্রাহকই অবৈধ পন্থা নিয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি পুরনো গ্রাহকই বার্নারের সংখ্যা বাড়িয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো রাজস্ব থেকে বঞ্চিত।
জানা যায়, সম্প্রতি তিতাস গ্যাস অফিসে সকল শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে একাধিক কর্মকর্তা জানান, দিনের পর দিন আবাসিক সেক্টরে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও অভিযানে সবাই ক্লান্ত। কারণ, আবাসিক খাতের প্রায় প্রতিটি বাড়িই অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে। তিতাসের পক্ষে গিয়ে সব বাড়ি শনাক্ত করা কঠিন কাজ। কিন্তু গ্রাহকরা এটি অবৈধভাবে ব্যবহার করতে চান না। কর্মকর্তারা জানান, বৈধ সংযোগ বন্ধ থাকায় অবৈধ ব্যবহার বাড়ছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, মোট গ্যাসের ১২ শতাংশ ব্যবহৃত হয় আবাসিক খাতে। বাকিটা শিল্প ও অন্যান্য খাতে। তবে আবাসিক খাতে অবৈধ ব্যবহার বন্ধে অভিযানে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। অন্যদিকে শিল্পে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ থাকলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ অনুমোদন বা বার্নার সম্প্রসারণ করলে বিদ্যমান ব্যবহারের মধ্যে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব বাড়বে। নতুন গ্যাস বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না। গ্রাহকরা শুধুমাত্র কাগজে বৈধতা পাবেন।
বিষয়টি নিয়ে তিতাসের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, বিগত সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও জ্বালানি বিভাগের দায়িত্বে থাকা সচিবরা বারবার আবাসিক সংযোগ খোলা ও বার্নার সম্প্রসারণের অনুমতি দিয়ে গ্যাসের ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু এলপিজি ব্যবসায়ী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবাসিক খাতে সংযোগ দিয়ে চুলার সম্প্রসারণ বন্ধ রাখতে প্রভাবিত করেছিল। কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের দল সারাদেশে অভিযান চালিয়ে দেখেছে যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সেনা ব্যারাক, সাধারণ মানুষের বাড়িতে প্রয়োজনীয় আবাসিক গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ নেতা ও কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানির অসাধু ব্যক্তিরা গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন। এখন অভিযান চালিয়েও তা কমানো যাচ্ছে না।
কর্মকর্তারা আরও জানান, কোনো কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে দিনে যে পরিমাণ অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করা হয় তা কয়েক মাস ধরে দুই থেকে চার লাখ আবাসিক গ্রাহকের ব্যবহারের সমান। ফলস্বরূপ, আমাদের শিল্পেও আমাদের প্রচারণা জোরদার করা উচিত। সরাসরি আবাসিক গ্যাস সংযোগ না হলে অন্তত বার্নার এক্সটেনশন অনুমোদন করতে হবে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে আবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য মাত্র ৫৬ হাজার গ্রাহক দীর্ঘদিন ধরে ডিমান্ড নোট জমা দিয়েও গ্যাস সংযোগ পাননি। তাদের সংযোগ দেওয়া হয়নি এবং টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে তিতাস সিদ্ধান্ত নেয়, কেউ চাইলে টাকা ফেরত দেবে। তবে বেশির ভাগ গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি।
এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেওয়া এখন খুবই সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিটি পাড়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য বেশ কিছু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এসব সিন্ডিকেটকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের মদদ রয়েছে। ফলে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো চাইলেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করতে পারছে না। তিনি বলেন, আগে যাদের এক-দুটি গ্যাস বার্নারের অনুমোদন ছিল সময়ের সঙ্গে তা বেড়েছে। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকবলের অভাবে সব বাড়ি চেক করতে পারছে না। অন্যদিকে যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা প্রায়ই অবৈধ সুযোগ নিচ্ছেন। ফলে অবৈধ গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু চুলা বাড়ানোই নয়, অনুমোদন ছাড়াই অনেক এলাকায় অবৈধভাবে নতুন বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।