প্রকৃতি।সোনালী ধানের উপর নাচছে টিয়া

0

‘টিয়ে পাখির বিয়ে হবে/বৈরাত হবে বক/ময়না হুতোম পেঁচা চড়ুই/গাঙ গান হাহিবে রক’। ‘টাই পাখির বিয়ে’ শিরোনামের কবিতাটি লিখেছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হাবিবি। তার এই ছড়ায় টিয়া পাখির প্রফুল্লতার বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। টিয়া পাখির এমন চঞ্চলতা দেখা গেছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় শস্যভাণ্ডার গুমাই বিলে। প্রতি বছর এমন দিনে চার হাজার একর আয়তনের এই বিশাল বিলে ঝাঁক টিয়া পাখি আসে। সুখে পাকা ধান খেতে তারা গান গাইতে আসে। বন্ধুর সঙ্গে খুন মা। যদিও এমন এক ঝাঁক কান্না কৃষকদের কষ্ট দেয়, তবুও তারা অতিথিদের আনন্দে স্বাগত জানায়।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, ‘সাধারণত হালকা শীতের সময় ধান কাটার সময় এই পরিযায়ী পাখির দল গুমাই বিলে আসে। এই পাখিরা তাদের বিলে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও গাছপালা খায়। এই পরিযায়ী পাখিরা আসে উত্তর হিমালয়, নেপাল, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীনের জিনজিয়াং এবং ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। তারা অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে আসতে শুরু করে। তিন মাস বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চলে যায়।

পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে ৩১৬ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি রয়েছে। এসব পাখির বেশির ভাগই আসে শীত মৌসুমে। হাজার হাজার মাইল উড়ে যাওয়া পরিযায়ী পাখির মধ্যে রয়েছে ঈগল, পিয়ন হাঁস, মলার্ড, নীল হেরন, লাল হাঁস, কালো হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, লেজার গ্যানেট, কুট হাঁস, জেস, দাগযুক্ত জেস, ম্যালার্ড, ম্যালার্ড, ময়ূর, গ্রেবস, গ্রেবস। অথবা ছাগা, নেট মাডক্রিপার, ছোট জিরা, বাটান, পিন্টেল, পাটি সরালি, কোপাডুবুড়ি, ছোট পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি, কালো কুট, হাঁস, রাজহাঁস, সাদা বক, ডালপিপি, পানমুর্গী, কাস্তেচরা, বেগুনি কালেম, পানকৌড়ি, ভুত হাঁস, ভুত হাঁস। , ডাহুক, ছোট সরালী, খঞ্জনা, চাতক, মাদুর চরা, কসাই পাখি, গাঙ্গেয় পায়রা, রাজ সরালী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. গাজী আসমত আলী বলেন, গুমাই বিলে বিচরণকারী পাখিগুলো পরিযায়ী পাখি বলে আমার মনে হয় না। এগুলো দেশীয় পাখি হতে পারে। এ ধরনের পাখির ঝাঁক কোনো জমিতে পড়লে ফসলের ক্ষতি হয়। তবে, এই পাখিদের ক্ষতি করা উচিত নয়। পাখিরাও বেঁচে থাকার জন্য অনেক পোকামাকড় খায়। এ ছাড়া জীববৈচিত্র্যের জন্য পাখিদের অবাধ বিচরণও জরুরি।’

শুধু গুমাই বিল নয়; পাশ্ববর্তী জুটমিল বিল, নলুয়া বিল, পদুয়া বিল, উত্তর রাঙ্গুনিয়ার হোচনাবাদ বিল, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার বিল এলাকায় চা পাখির ঝাঁক কিচিরমিচির করছে। ধানক্ষেতের উপর পাখিদের ওড়ার মাধ্যমে এক অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এভাবে ধান দিয়ে পাখিদের খাওয়ানোয় ক্ষুব্ধ স্থানীয় কয়েকজন কৃষকও। পাখি মেনে নিলেও এ নিয়ে তাদের মধ্যে নানা ক্ষোভের অনুভূতি রয়েছে।

পদুয়া বিলের কৃষক আবদুর রহমানেরও গুমাই বিলে জমি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এক ঝাঁকে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার পাখি থাকে। তারা একসাথে খাবারের জন্য অর্থ প্রদান করেছে। খাওয়ার পরে, তারা আবার একসাথে উড়ে যায়। আমরা তাদের শিকার করি না। কিন্তু তারা আমাদের ফসলের ক্ষতি করছে।’ গুমাই বিলের আরেক কৃষক হুমায়ুন কবির তার কথার সুরে বলেন, ‘পাখিরা আমাদের ক্ষতি করছে। কিন্তু আমার কোন আফসোস নেই। পাখিদের খাওয়ানো আমাদের দায়িত্ব।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ইব্রাহিম আল হায়দার বলেন, ‘পরিযায়ী পাখিরা মূলত বন ও চারণভূমির পাখি। তারা ফসলের ক্ষতি করে না। যেসব পাখি ফসলের ক্ষতি করে তারা দেশীয় পাখি। এর মধ্যে রয়েছে টিয়া, চড়ুই, বেবুন এবং ঘুঘুর মতো পাখি। ফসলের ক্ষতি হলে স্বাভাবিকভাবেই কৃষকরা ক্ষুব্ধ হবেন। তাই একদিকে পাখি রক্ষা, অন্যদিকে খামারিদের ক্ষতিপূরণ- দুটি বিষয় ভাবতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *