বিএনপি এখন আর বাধাহীন কর্মসূচির সুযোগ পাচ্ছে না
রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বাধামুক্ত কোনো কর্মসূচি পালনের সুযোগ পাচ্ছে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত দলটির নেতা-কর্মীদের মোকাবিলায় পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রাজপথে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে দলটির শীর্ষ সূত্রে জানা গেছে। তবে বিরোধী দলকে বারবার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সরকারের পদত্যাগ, বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, কারাবন্দি নেতাদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির দ্বিতীয় পর্বের আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ছিল শনিবার। ওইদিন সারাদেশে বিএনপির গণমিছিলে পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, ভোলা, নোয়াখালী, নীলফামারী, ঝালকাঠি ও বরগুনায় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন দলটির নেতাকর্মীরা। এদিকে পঞ্চগড়ে গণসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক নেতা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি। তবে পুলিশ বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই নেতার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের কারণে ঢাকা ও সিটি করপোরেশনের ভোটের কারণে কর্মসূচি থেকে বাদ পড়েছিল রংপুর। গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, এলডিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য সরকারবিরোধী দল এই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভাগীয় শহরে বিএনপির গণসভা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। তবে ঢাকায় সমাবেশের স্থান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। পরে রাজধানীর গোলাপবাগে সমাবেশ করার সুযোগ পায় বিএনপি। প্রায় দুই মাসে দশটি জনসভায় প্রকাশ্যে বাধা দেওয়া হয়নি। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে ভিড় ঠেকানোর চেষ্টা হয়েছে। এছাড়া সমাবেশে যোগদানের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে, এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগ তোলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
এর আগে সেপ্টেম্বরে ২০টির বেশি জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সরাসরি হামলার অভিযোগ ওঠে। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ-বিএনপির ৬০টি সরাসরি সংঘর্ষে এক হাজার ১৩০ জন আহত হয়েছেন।
একই সময়ে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ২২টি সংঘর্ষে ৩৯৫ জন আহত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্যের মতে, বিএনপি তাদের স্বাভাবিক কর্মসূচি পালন করতে দিলে এক পর্যায়ে তারা সহিংস হয়ে ওঠে। তাদের দমন করতে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে বল প্রয়োগ করতে হবে, এমনকি গুলিও চালাতে হবে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক মহলেও অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এ সুযোগে বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে সহিংসতার আশ্রয় নেয়। তাই শুরুতেই তাদের মোকাবেলা করার কৌশলে রয়েছে সরকার।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য বলেন, রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ আন্দোলনের মাধ্যমেই একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দিকে নিজেদের সংগঠিত করে। বিএনপি আন্দোলন করে বর্তমান সরকারকে কাবু করতে পারবে না- এটা সবাই জানে। তবে আগামী নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের সংগঠিত করার সুযোগ নিতে পারেন তারা। এটা বিএনপিকে দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, বিএনপিকে বিনা বাধায় কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেওয়ার পর ঢাকার বাইরে সব শহরেই সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। এভাবে চলতে থাকলে জাতীয় নির্বাচনের আগে দলকে সংগঠিত করতে পারে বিএনপি। বিএনপির কর্মসূচিতে জনসমাগম বাড়ছে বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদন সরকারকে জানিয়েছে। এছাড়া বিএনপিকে হঠাৎ করে কোনো বাধা ছাড়াই কর্মসূচি পালন করতে দেয়ায় আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মনোবল হারানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে হাইকমান্ডকে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। সবকিছু আমলে নিয়ে বিএনপিকে ঠেকাতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি অতীতের মতো এখনো ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে- সংসদ থেকে পদত্যাগ তার প্রমাণ। এতে বোঝা যায়, বিএনপি এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি যেখানে তারা সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাই এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে পারলে সরকার বিশেষ সুবিধা পাবে। তারা যতই বর্জন করুক বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক না কেন তারা আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে পারবে না।
অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন বিরোধী দল বিএনপিতে থাকার কারণে তাদের সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন দুটোই বেড়েছে।