আধুনিক গণপরিবহনের যুগে বাংলাদেশ
আধুনিক গণপরিবহনের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার যানজটের সবচেয়ে বড় সমস্যা সমাধানে আসছে বহু প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল। যাত্রীরা গাড়ির মতো সিগন্যালে আটকে বা সাধারণ ট্রেনের মতো পারাপার না হয়ে ঘড়ির সময় অনুযায়ী গন্তব্যে পৌঁছাবেন।
আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমআরটি-৬ মেট্রোরেল লাইনের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও সেকশনের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক ট্রেনগুলি ১১.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটে যাত্রী বহন করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিস্তারিত ও মেট্রোরেলের সময়সূচি জানাতে মঙ্গলবার আগারগাঁও স্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে মেট্রোরেল নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সরকারি কোম্পানি ডিএমটিসিএলের মতে, পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল ট্রেন চলবে।
এ বিষয়ে কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি। তবে সকাল ৮টা থেকে চার ঘণ্টা ট্রেন চলবে বলে সূত্র জানিয়েছে। এর আগে দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও সেকশনের সাতটি স্টেশনের মধ্যে শুধুমাত্র পল্লবী যাত্রী বহন করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে এই সিদ্ধান্তেরও পরিবর্তন হয়েছে। ট্রেনটি দিয়াবাড়ি স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে সরাসরি আগারগাঁও স্টেশনে যাবে। আগারগাঁও থেকে একই পথে দিয়াবাড়ি যাবেন। এই রুটের স্টেশনগুলো ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হবে।
এমআরটি-৬ লাইনের জন্য জাপান থেকে ২৪ সেট ট্রেন কেনা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ১৯টি ট্রেন এসেছে। ১৯ ধরনের পরীক্ষা চলছে। পারফরম্যান্স টেস্ট, ট্রায়াল রান এবং ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট সম্পন্ন করা ১০টি ট্রেন দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও সেকশনে চলবে। আরও দুটি মজুদ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি ট্রেন চলবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি সাড়ে তিন মিনিটে ট্রেন চলবে। তবে প্রাথমিকভাবে এটি ১০ মিনিটের ব্যবধানে চলবে। যাত্রীরা দিয়াবাড়ি ও আগারগাঁও স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ১০ মিনিট অপেক্ষা করবে যাতে বোর্ডিং সুবিধা হয়। যে স্টেশনগুলি পরে খোলা হবে, সেখানে যাত্রা ১০ মিনিটের জন্য বন্ধ থাকবে। যাইহোক, মেট্রোরেল মার্চ বা এপ্রিলে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক কার্যক্রমে চলে যাওয়ার পরে, স্টেশনটি মাত্র ৩০ সেকেন্ডের জন্য থামবে। DMTCL-এর মতে, যাত্রীদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও ভাড়া ৬০ টাকা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচি অনুযায়ী বুধবার গণভবন থেকে সড়কপথে দিয়াবাড়ি যাবেন প্রধানমন্ত্রী। স্টেশনের পাশের খেলার মাঠে সমাবেশ হবে। সকাল ১১টার দিকে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন শেখ হাসিনা।
সড়ক পরিবহন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আর্থিক কৃচ্ছ্রতা অর্জনের লক্ষ্যে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে পরিমিত। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মতো জাঁকজমক আর হবে না। সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী স্মারক ডাকটিকিট ও মেট্রোরেলের প্রথম দিনের কভার উন্মোচন করবেন। তারপর স্মারক নোট উন্মোচন. ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে মেট্রোরেল প্রকল্পে ঋণদাতা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রতিনিধি এবং ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখবেন।
সমাবেশ শেষে দিয়াবাড়ী স্টেশনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। স্টেশনের প্রধান ফটকে তেঁতুলের চারা লাগাবেন তিনি। এর পরে, স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় অর্থাৎ কনকোর্স লেভেলে যেতে এসকেলেটর ব্যবহার করবেন। এরপর তৃতীয় তলায় অর্থাৎ প্ল্যাটফর্মে যান। সেখানে সরকারপ্রধান সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন। পথে সহযাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় করে ট্রেনে করে আগারগাঁও যাবেন। সেখান থেকে ফিরে যাবেন গণভবনে। সরকারি তফসিলে জনসভার কথা উল্লেখ না থাকলেও দিয়াবাড়িতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ব্যাপক জনসমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৩০৮ জন হলেও প্রাথমিকভাবে প্রতিটি ট্রেনে ১০০ থেকে ৩৫০ জন যাত্রী নিয়ে চলবে। মেট্রোরেলের ছয় বগির ট্রেনের দুই পাশে ট্রেলার কোচ থাকবে। যেখান থেকে চালকরা ট্রেন পরিচালনা করবেন। প্রতিটি ট্রেলার কোচের যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৭৪ জন। চারটি মাঝারি বগির প্রতিটিতে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৯০ জন। এমআরটি-৬ এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (নির্মাণ) আব্দুল বাকী মিয়া বলেন, যাত্রী কম ও সাতটি মিডওয়ে স্টেশন না খোলার বিষয়ে কাজ শেষ হয়েছে। ধীরে ধীরে সব স্টেশন খুলে দেওয়া হবে।