গুনতে হবে বড় অঙ্কের জরিমানা।বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ অর্থ জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে ৫ ইসলামী ব্যাংক

0

৫টি শরিয়াহ-ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ আমানত বা সিআরআর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে বিভিন্ন জালিয়াতি এবং ভুয়া কাগজের প্রতিষ্ঠান দ্বারা তৈরি বেনামি ঋণ নিয়ে আলোচনার মধ্যে। এই তালিকায় রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, সোস্যাল ইসলামী এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যর্থ হওয়া ব্যাংকগুলিকে এখন বিশাল জরিমানা দিতে হবে। এসব ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের আমানত উত্তোলনের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিদ্যমান নিয়ম অনুসারে, একটি ব্যাংককে দৈনিক ভিত্তিতে মোট কল এবং মেয়াদী আমানতের ৩.৫ শতাংশ এবং দ্বি-সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ৪ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংবিধিবদ্ধ নগদ আমানত বা CRR হিসাবে বজায় রাখতে হবে। যদি কোনো ব্যাঙ্ক CRR সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাকে ৫ শতাংশ এবং সংরক্ষিত না থাকা অংশের উপর ৯ শতাংশ হারে জরিমানা সুদ দিতে হবে। আর সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ বা এসএলআর হিসেবে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে ৫ শতাংশ এবং প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে ১৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হবে। এই ক্ষেত্রে, ব্যর্থ অংশের উপর বিশেষ রেপো বা ৮.৭৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করা হয়। দণ্ডের সুদ বা জরিমানা মওকুফ করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারার অধীনে সরকারকে জরিমানা মওকুফের সুপারিশ করতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে পড়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ওই দিন ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ১৬০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রায় ৫০০ কোটি, এসআইবিএলের ৩০০ কোটির বেশি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৮০০ কোটির বেশি ঘাটতি রয়েছে। ১৫ নভেম্বর থেকে এই ৫টি ব্যাংককে নিবিড় তত্ত্বাবধানে আনা হয়েছে। প্রতিদিন এসব ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণসহ বিভিন্ন তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হয়। ঋণ জালিয়াতি, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগের ভিত্তিতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পর্যবেক্ষক রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানতে চাইলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাবিব হাসনাত বলেন, বৃহস্পতিবারের পর সোমবার তাদের সিআরআর কম হয়েছে। মোটা অঙ্কের দুটি এফডিআরের কারণে এমনটি হয়েছে। তিনি বলেন, অন্য সময় একটা এফডিআর ভেঙে আরেকটা আসবে। কিন্তু সময় এখন খুব কঠিন যাচ্ছে। অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা দুটি এফডিআর রাখেনি। তিনি বলেন, এখন সব শাখাকে আমানত বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের আমানত কমেছে ১ লাখ ৪০ হাজার ২২১ কোটি টাকা। গত অক্টোবর শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত জুন শেষে তা ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার অন্য ব্যাংকের জমার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোট আমানত ছিল ৪৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৩২ হাজার ৫৮৪ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকে ১৭ হাজার ৯৫১ কোটি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ১১ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ আগে অন্যান্য শরীয়াহ ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিত, এখন ব্যাংক নিজেই সংকটে থাকায় এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য ব্যাংকেও। ব্যাংকিং পরিভাষায় একে বলা হয় পদ্ধতিগত ঝুঁকি। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ঋণ নিয়েছে এমন কথা আগে শোনা যায়নি। হঠাৎ করেই বড় ধরনের প্রতারণার তথ্য সামনে আসায় মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রচলিত ব্যাঙ্কগুলি বিল এবং বন্ডের বিনিয়োগ উপাদানের বিপরীতে এসএলআর রাখতে পারে, সূত্র জানিয়েছে। যাইহোক, শরিয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংকগুলি এই বিল এবং বন্ডগুলি কিনতে পারে না কারণ এগুলো সুদ-ভিত্তিক। ২০২০ সালে, দেশে প্রথমবারের মতো শরিয়াহ-ভিত্তিক সুকুক বন্ড চালু করা হয়েছিল। সুকুক বন্ডের বিপরীতে বাজার থেকে ১৮,০০০ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ১০টি ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও প্রচলিত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ যেকোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এসব বন্ড কেনার সুযোগ পেয়েছে। ফলে ইসলামী ব্যাংকগুলোর এসএলআরের বড় অংশ নগদে রাখতে হয়।

স্বনামধন্য কাগজের প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাজশাহী ভিত্তিক নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা লাভবান হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসেও নাবিল গ্রুপের ঋণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামীর রয়েছে ১২ বিলিয়ন টাকা এবং এসআইবিএলের রয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা। বাকি ৯ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। একক গোষ্ঠী ঋণের সীমা লঙ্ঘন করে নামমাত্র কাগজের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার আলোচনার মধ্যে কিছু ব্যাংক থেকে আমানত উত্তোলন বেড়েছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত রেকর্ড ২ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে ছিল কারণ অনেক লোক আমানত তুলে নিয়ে বাড়িতে রেখেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *