রোগীর খাবার নিয়ে প্রতারণা রুখবে কে
সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পুরোপুরি চালু না হলেও নানা কারণে আলোচিত। পাঁচশ শয্যার এই হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন প্রতারণা। সরকারি টেন্ডার না হলেও ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে বিশেষ চুক্তির আওতায় খাবার সরবরাহ করছে স্থানীয় দুই সাব-কন্ট্রাক্টর। দাম বাড়ার অজুহাতে নিম্নমানের খবর দিলেও কেউ তা দেখবে না। এর আগে নির্মাণ কাজের সময়ও কাগজে-কলমে ক্রয়-জরিপ কমিটি দেখিয়ে ভুয়া বিল ও ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ লোপাটের বিষয়েও আলোচনা হয় কোম্পানিটির।
ইনডোর-আউটডোর সুবিধা পুরোপুরি চালু না হলেও ছয় মাস আগে থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সকালের নাস্তার তালিকায় প্রতিটি রোগীকে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে ২০ গ্রাম রুটি দেওয়া হয়েছে। দুধ সাদা পানির মত। মুরগির মাংস ২২০ গ্রাম প্রতি রোগীর জন্য ২৯ কেজি ৭০০ গ্রাম সরবরাহ করার চুক্তিতে ১৩৫ রোগীর জন্য দিনে দুবার। কিন্তু ব্রয়লার মুরগির শক্ত মাংস ৫ কেজি ৭০০ গ্রাম সরবরাহ করা হয়। রোগী প্রতি ১১০ গ্রাম মুরগির মাংসের পরিবর্তে প্রতিদিন ২০ গ্রাম দেওয়া হয়। সব রোগী তা পায়নি। সোনালি চালের বদলে দেওয়া হচ্ছে মোটা ও সুগন্ধি চাল।
রান্নাঘরে বাবুর্চির দায়িত্বে থাকা আউটসোর্সিং কর্মচারী জাহাঙ্গীর হোসেন, গোলাম মোস্তফা ও মোকাদ্দেস আলী বলেন, সপ্তাহে দুই দিন ভাত মাছ, পাঙ্গাস মাছ দুই দিন, মুরগি দুই দিন ও গরুর মাংস দেওয়ার চুক্তি থাকলেও। দিন, বাস্তবে ওজন ভিন্ন। খাসির মাংস দুই বেলায় ৬০ গ্রাম দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় ৮ থেকে ১০ গ্রাম। ছয় মাস ধরে চললেও দেখার কেউ নেই। সাত মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না আউটসোর্সিং কর্মীদের। তারা প্রতিবাদ করলে কর্তৃপক্ষ তাদের বহিষ্কার করতে পারে। হাসপাতালের স্টুয়ার্ড মাসুদ রানা বলেন, ‘বারবার প্রতিবাদ করায় তিনি ঠিকাদারদের শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। খাদ্য তদারকি কমিটির লোকজন প্রতিদিন তদারকি করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. কৃষ্ণ কুমার পাল বলেন, ‘মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে রোগীর খাবার নিয়ে ব্যাপক প্রতারণা হলেও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ অমানবিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুরগির মাংস প্রতি খাবারে ১১০ গ্রামের বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে ২০ গ্রাম। গরুর মাংস দিবস ভিন্ন কিছু। পাঙ্গাস-রুই মাছ আকারেও ছোট। চাল সুগন্ধযুক্ত। বিপদ বললেও, না বললেও বারবার বিবেকের কাছে পরাজিত হই।’
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ফেরদৌস মুহা. খায়রুল আতাতুর্ক বলেন, হাসপাতালের ইনডোর-আউটডোর জরুরি অপারেশনের কারণে রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। চুক্তিভিত্তিক বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত মানের খাদ্য সরবরাহ না করায় জরুরি ভিত্তিতে দরপত্র আহ্বান করা হবে। কিন্তু মাত্র ১২৫ টাকায় প্রতিদিন একজনের খাবারের ব্যবস্থা করা সহজ নয়। রোগীর জন্য প্রতিদিন ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসআর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের দায়িত্বে থাকা সাব-কন্ট্রাক্টর একরামুল হক বলেন, সরকারি বাজেট রোগীপ্রতি ১২৫ টাকা হলেও ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ বাদে ৯২ টাকায় তিনবেলা খাবার দেওয়া কঠিন।
এর আগেও এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণকাজে অর্থ লোপাটের বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এম জাহান ও ঢাকার গ্রীন ট্রেডের মালিক মাহফুজ হুদা সৈকত ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাব শাখার কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে মামলা হলে দুদক তদন্ত করবে। তবে অভিযুক্তরা এখনও পলাতক রয়েছে।