যুগপৎ গণআন্দোলনে বিএনপির ১০ দফা

0

সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে গণআন্দোলনের ১০ দফা খসড়া তৈরি করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। একই সময়ে, দলটি রাজ্যের সামগ্রিক সংস্কারের জন্য একটি ২৭-দফা রূপরেখাও তৈরি করেছে। যৌথ আন্দোলনে আগ্রহী সমমনা দলগুলোর কাছে গত মঙ্গলবার দুটি খসড়া প্রস্তাব হস্তান্তর করা হয়। আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে দলগুলোকে এ বিষয়ে তাদের মতামত জানাতে অনুরোধ করেছে বিএনপি। সমমনাদের নতুন কোনো প্রস্তাব এলে যৌথ সভায় যোগ-বিয়োগের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় আলোচিত সাধারণ সভায় একযোগে গণআন্দোলনের ১০ দফা ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করতে পারে বিএনপি। সমমনা দলগুলো একই দিনে নিজ নিজ দলীয় প্ল্যাটফর্ম থেকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করবে কিনা তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে দুর্বার গণআন্দোলনে সরকারবিরোধী দলগুলো ঐক্যমতে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে তারা নিজস্ব ব্যানারে দাবি আদায়ে আন্দোলনের কর্মসূচিও পালন করছেন। এখন যুগপৎ আন্দোলন শুধুই আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত সংলাপ করবে বিএনপি। ওই সব বৈঠকের মাধ্যমে আন্দোলনের দাবি-দাওয়া ঘোষণার তারিখ ও পদ্ধতি এবং রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখাসহ সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, গণআন্দোলনের ১০ দফা খসড়ায় সংসদ বিলুপ্ত করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ; ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত অনুচ্ছেদ ৫৮.বি-সিএবং ডি-এর আলোকে, একটি নির্দলীয় নির্বাচনী বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন; বর্তমান কমিশন বিলুপ্ত করে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন; সাজা বাতিল ও খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আলেমদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নতুন মামলায় গ্রেপ্তার বন্ধ এবং সভা-সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার পাশাপাশি; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সমস্ত পুরানো আইন বাতিল করুন; বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, পানিসহ সরকারি সেবার সব খাতে হার বৃদ্ধির জনবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল; সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ে আসা; বিগত ১৫ বছরে মানি লন্ডারিং, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব খাতে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন; নিখোঁজ সকল নাগরিককে উদ্ধার, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের মামলার দ্রুত বিচার, বাড়িঘর ভাংচুর, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও সম্পত্তি দখল এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকার ছাড়া স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার কথা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে আসছেন। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে দেশের মানুষও জেগে উঠেছে। বিএনপির চলমান বিভাগীয় গণসমাবেশ তার প্রমাণ দিয়েছে। শত বাধা ও গণপরিবহন বন্ধ করেও মানুষের ঢেউ থামানো যায়নি। তারা শিগগিরই সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন। একই সঙ্গে সাধারণ পরিষদ থেকে বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলকারী সরকারের পতনের দাবিতে এক দফা কর্মসূচিও ঘোষণা করবেন তিনি। যোগাযোগ করা হলে গণতান্ত্রিক মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির দাবি-দাওয়া এবং রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা এখনো চূড়ান্ত বলা যাচ্ছে না। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। একে অপরের সাথে আলোচনা। তবে আমরা অনেক বিষয়ে একমত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কবে নাগাদ ঘোষণা হবে তা বলা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘোষণা করা যেতে পারে।

সূত্র জানায়, গতকাল গণতন্ত্র মঞ্চের সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে বিএনপির দেওয়া গণআন্দোলন ও রাষ্ট্র সংস্কারের দফা নিয়ে আলোচনা হয়। আজ আরেক দফা বৈঠকে গণতন্ত্রের মঞ্চে সবার মতামত জানানো হবে, এ বিষয়ে তারা বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করবেন, সেই বৈঠকেই তা চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়ার উদ্যোগের পর সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *