অক্টোবর মাসে ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত

0

সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত ভাইরাস ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। তবে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়েও এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। গত বিশ বছরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। বর্ষা এসেছে দেরিতে। টানা বৃষ্টিতে বাড়ির চারপাশে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বেশি ছিল। ফলে ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘায়িত হয়েছে। এমনই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি থাকবে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত।

তারা বলছেন, সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সারা বছর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই ভাইরাসের প্রভাব প্রধানত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে। সর্বাধিক ঘটনা এবং মৃত্যু সাধারণত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে ঘটে। তবে এ মাসের মাঝামাঝি সময়েও ডেঙ্গু বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। গত ১৬ দিনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এই সময়ে ৩৯ জন মারা গেছে। গত বছরের অক্টোবরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫ হাজার ৪৬৭ জন, মৃত্যু হয়েছিল ২২ জনের। ২০২০ সালে, এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১৬২ জন। এ বছর মারা গেছে তিনজন।২০১৯ সালে ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। ওই বছরের অক্টোবরে ৮ হাজার ১৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় এবং ১১ জনের মৃত্যু হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছর চার ধরনের ডেঙ্গুর মধ্যে তিনটি (স্টেইন-১, ৩, ৪) বেড়েছে। শক সিনড্রোমের কারণে মৃত্যু, অর্থাৎ হঠাৎ শরীর ভেঙে পড়া, রক্তক্ষরণজনিত জ্বর বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ সময়মতো চিকিৎসা না করালে বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে দেরিতে পৌঁছানোর কারণে প্রায় অর্ধেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে আসা রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশের ২৫টি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও রোগী। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। এ বছর মোট মৃত্যুর ২২ শতাংশ এই জেলায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আহমদুল কবির বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের বেশির ভাগই আগে এক বা একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এবার লক্ষণ স্পষ্ট। বেশিরভাগ রোগীই জটিল অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে আরও বেশি মানুষ।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৮৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী। যা চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ রোগীর সংখ্যা। এ সময় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২৫ হাজার ১৮১ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯৪ জন।

রাজধানীর দুই শহরের মধ্যে মিরপুর, উত্তরা, মুগদা, ধানমন্ডি ও যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষ বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য অধিদফতর এসব এলাকাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এসব এলাকায় মশার প্রকোপ থাকলেও সিটি করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চোখে পড়ে না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মূলত মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জড়িত।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জোবায়দুর রহমান বলেন, ডিএনসিসির যেসব এলাকায় এডিস মশার উপদ্রব রয়েছে সেখানে ইতিমধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান জোরদার করা হয়েছে। মিরপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখানসহ অনেক এলাকায় আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অক্টোবরেও ডেঙ্গুর পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছে। এমন পরিস্থিতি আরও দুই সপ্তাহ থাকতে পারে। হটস্পট ব্যবস্থাপনায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি। যার কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি সেখানে ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালাতে হবে। তাহলে এক রোগী থেকে অন্য রোগীর সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

দেশের আট বিভাগের ৫০টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লেও প্রধানত পাঁচ বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কক্সবাজার জেলায়। এ জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৪২ জন। তাদের মধ্যে ২১ জন মারা গেছেন। মোট মৃত্যুর ২২ শতাংশ এই জেলায়।

এদিকে পাবনার রূপপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যা ডেঙ্গু রোগীতে ভরে গেছে। ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ২০৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছে। রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৯০ শতাংশ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *