ধর্মঘট প্রত্যাহারে অশান্তি বহাল

0

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নামে পার্বত্য জেলার বাঙালিদের একটি সংগঠন সোমবার ৩২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিলে মঙ্গলবার বিকেলে তা প্রত্যাহার করে নেয়। এ ঘটনায় হরতাল প্রত্যাহারকারীরা বিজয়ী হওয়ায় পার্বত্য এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

হরতাল আহ্বানকারীদের ৭ দফা দাবির এক নম্বর ছিল বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করা। তারা সরকারি এই সংস্থার সভা বয়কটের ডাক দেন। হরতাল পরিস্থিতির কারণে সভার সদস্যরা সভায় উপস্থিত হতে না পারায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমার অনুরোধে সভা স্থগিত করা হয়।

ভূমি বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি দশকের পুরনো সমস্যা, যা এই অঞ্চলে জাতিগত অস্থিরতার অন্যতম কারণ। নাগরিক পরিষদের মতো বাঙালি বসতি স্থাপনের তথাকথিত আন্দোলনও ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার সরকার স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে।

ভূমি বিরোধ দীর্ঘকাল ধরে তীব্র হয়েছে, বিশেষ করে ১৯৮০ এর দশকে জিয়াউর রহমানের সময় থেকে যখন সমতল ভূমি থেকে ভূমিহীন বাঙালিদের সাথে পদ্ধতিগতভাবে বসতি সম্প্রসারিত হয়েছিল। তথাকথিত পুনর্বাসনে প্রতিটি বসতি স্থাপনকারীকে যে পরিমাণ জমি দেওয়া হয়েছিল তা তাদের বর্তমান মালিকানার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। সেসব জমির ফল ধরে রাখতে নাগরিক পরিষদ সেটেলমেন্ট কমিশনের কাজে বাধা দেয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বসতি স্থাপনকারীদের কোনো জমির দলিল নেই। তারা জমির খাজনা দেয় না। জমি সংক্রান্ত মৌজাভিত্তিক হেডম্যান ও গ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ীদের কোনো রেকর্ড তাদের কাছে নেই। রাজার দেওয়া জমির খাজনার কোনো রশিদ নেই। তবে তাদের প্রত্যেকেই প্রচুর জমির মালিক। ভূমি কমিশন যখন ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি শুরু করে, তখন তারা দখলকৃত জমির কোনো নথি দেখাতে পারে না। এ কারণে ওইসব জমি তাদের দখল থেকে চলে যাবে। তাদের ভয় সবসময়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের (ভূমি কমিশন) চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক  বলেন, কমিশনের বৈঠক ঠেকাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ যে সাতটি দাবি উত্থাপন করেছে তার সবগুলোই অবৈধ। কোনো দাবিই আইনি কাঠামোর মধ্যে নেই। জমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে আজ রাঙামাটিতে কমিশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে বারবার বাধা দিলে কমিশন কোনো কাজ করতে পারবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে সকল পক্ষকে সমর্থনের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নিয়োগ নিয়ে আলোচনা করে তাদের (চেয়ারম্যান) কাছে তাদের দাবি জানাতে পারতেন। তা করতে ব্যর্থ হলে হরতাল ডেকে সভা স্থগিত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, ভূমি কমিশন তাদের সাত দফা দাবি না মেনে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করলে পার্বত্য অঞ্চলের ৫৪ শতাংশ বাঙালি ভূমিহীন হয়ে পড়বে। ভূমি কমিশনে পার্বত্য বাঙালি প্রতিনিধিদের রাখা হয়নি। কমিশনের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিলের সুযোগ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি জরিপ করা হয়নি। আরও অনেক ক্ষেত্রে ভূমি কমিশন আইনের সঙ্গে অসঙ্গতি রয়েছে। এই আইন সংশোধন করতে হবে। পাহাড়ের বাঙালি জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে ভূমি কমিশনের কাজ শুরু হলে তারা সাহায্য করবে বলে জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমিতির (জেএসএস) প্রচার বিভাগের নেতা দীপায়ন খীসা  বলেন, সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ মূলত জুম পার্বত্যবাসীর অধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। পাহাড়ে জাতিগত বিদ্বেষ, বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার উসকানি দিয়ে সেখানকার রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে তারা বিভিন্ন সময়ে মাঠে নামছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়, ভূমি কমিশন তাদের সভা ডাকলে এই সংগঠন মাঠে নেমে কেউ বা কেউ তাদের নামিয়ে দেয়। অবরোধ ও হরতাল ডেকে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা এবং কমিশনের বৈঠকে বিঘ্ন ঘটানোই তাদের মূল কাজ। আবার ভূমি কমিশনের সভা না হলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

পার্বত্য চট্টগ্রামের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির প্রধান দিক হলো পার্বত্য ভূমি সমস্যা সমাধান করা। সেই লক্ষ্যে ভূমি কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়। কমিশন আইনের আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভূমি কমিশনের কাজ রাষ্ট্রের কাজ। রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা দেওয়ার জন্য সেটলার সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা নিজেদেরকে অদৃশ্য শক্তি দাবি করে তথাকথিত নাগরিক কমিটির নামে মাঠে নামছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *