পাট জাগ দেওয়া যাচ্ছে না

0

ভরা বর্ষাকালেও বৃষ্টি হয় না। খাল, পুকুর, নদী শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে কৃষকের সব পরিশ্রম বৃথা যাচ্ছে। পাট তুলতে না পারায় ক্ষেতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। সময়মতো পাট কাটতে না পারায় আমন ধানের আবাদও ব্যাহত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মেহেরপুর ও রাজবাড়ী জেলার কৃষকরা চিন্তিত।

পানির অভাবে মেহেরপুরের কৃষকদের পাট আবাদ এলাকায় সেচের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। পাটের ব্যাগ নষ্ট হয়ে গেলে এবং বিশুদ্ধ পানি না থাকলে পাটের পচা ব্যাগ থেকে মানসম্পন্ন পাট পাওয়া সম্ভব হবে না। কৃষকরা কাঙ্খিত দাম পাবেন না।

মুজিবনগর উপজেলার জাতরপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, পানির অভাবে জমিতে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। পুকুর ও পুকুরে পাটের সেচ দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যারা পাট চাষের জন্য জলাশয় ভাড়া নিচ্ছেন, তারা বেশি টাকা চাওয়ায় অনেকেই পাট না কেটে জমিতে শুকিয়ে নিচ্ছেন। প্রতি বিঘা পাটের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে।

সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের কৃষক কুতুব উদ্দিন জানান, দ্রুত পাট কেটে জমি পরিষ্কার করা না হলে ধান চাষে ব্যাঘাত ঘটবে।

সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান জানান, ভৈরব নদীতে পানি রয়েছে। প্রশাসন নদীতে পাট উঠতে দিলে কৃষকরা লাভবান হতেন। কিন্তু তারা এটা করতে দেয় না। তাই কৃষকরা শ্যালো ইঞ্জিনের সাহায্যে পানি সংগ্রহ করে পাট তুলতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবেশ দূষিত হওয়ায় কৃষককে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সামছুল আলম জানান, কৃষকদের মধ্যে পাটের নতুন ফিতা রেটিং প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ডক্টর মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, ভৈরব নদীতে পাট তোলার সুযোগ দিলে তা আবার নাব্যতা হারাবে। নোংরা আবর্জনা মাছ জন্মানোর জন্য পরিবেশও নষ্ট করবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকদের পাটের গুড়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, রাজবাড়ীর কৃষকরা অভিযোগ করছেন, তাদের দুর্দশা সত্ত্বেও কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ পাননি তারা। তবে কৃষি কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার কালুখালী উপজেলার বাগমারা, চাঁদনী, চরসিলোকাসহ কয়েকটি গ্রামে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। কোথাও কোথাও মাঠের পাট রয়ে গেছে। কোথাও কোথাও পাট কাটছেন কৃষকরা। একটা মাঠের পাট লাল হয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে পাট গাছের উচ্চতা মাত্র দুই ফুট। কেউ কেউ মরিয়া হয়ে অল্প পানিতে পাট জাগছে। কেউ জাগছে কারো পুকুর।

কালুখালীর চরসিলোকা গ্রামের কৃষক দারোগ আলী জানান, তিনি পাট কেটে বাড়িতে রাখেন। ঘুম থেকে ওঠার জায়গা নেই। পাট লাগানোর শুরুতেই বৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য পাট খুব একটা ভালো না, এখন বৃষ্টি হচ্ছে না আর জাগাতে পারছে না। ১৩ শতাংশ জমিতে তিনি পাট বোনান। তার খরচ হয়েছে ছয় হাজার টাকা। এই টাকা উঠবে না।

সদর উপজেলার চান্দনী গ্রামের কৃষক হাসেম আলী জানান, পাট মৌসুম শেষে এখন ধান চাষের সময়। কিন্তু পাট কাটতে না পারায় তারা ধান লাগাতে পারছেন না। ধানের বীজতলাও ধ্বংসের মুখে।

কৃষক বাবলু দাস জানান, তারা এখন চরম সংকটে রয়েছেন। কিন্তু কৃষি অফিসের কেউ কৃষকদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন শেখ জানান, চাষিদের পাট সামান্য পানিতে ভিজিয়ে কলার খোসা ভালোভাবে বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে সূর্যের আলো না পড়ে।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শহীদ নূর আকবর জানান, রাজবাড়ীতে পাটের ফলন ভালো হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। শীঘ্রই বৃষ্টি হবে।

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে শহীদ নূর আকবর আরও বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা তাদের সার ও বীজ সরবরাহ করেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *