আইসিজেতে মিয়ানমারের বিপক্ষে রায়।চাপ থাকলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সহজ হবে না

0

রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করেছে। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে আপিল করে মিয়ানমার। তবে আইসিজে মিয়ানমারের এই প্রাথমিক আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হবে। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সহজ হবে না।

গত শুক্রবার আইসিজে মিয়ানমারের আপিল খারিজ করে দেয়। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, এই রায়ে মিয়ানমারকে বিচারিক দিক থেকে পিছিয়ে দিলেও প্রত্যাবাসনের জন্য রাজনৈতিক মাঠে দেশটিকে জয়ী হতে হবে। তিনি  বলেন, আদালত সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে করে বিচারিক দিক থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ সরাসরি লাভবান হবে না, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কারণ এর মাধ্যমে মিয়ানমারের অপরাধীরা শাস্তি পাবে। প্রত্যাবাসনের সাথে এর সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। প্রত্যাবাসন সহজ হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রক্রিয়া। এটাকে রাজনৈতিকভাবে জিততে হবে। রায়ে প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু হলেও বাংলাদেশকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, রায় রোহিঙ্গাদের জন্য ইতিবাচক। এ পর্যন্ত দুটি রায়ই রোহিঙ্গাদের পক্ষে গেছে। বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। কারণ এতে বাংলাদেশের আলোচকদের হাত শক্তিশালী হয়েছে। তিনি বলেন, এই রায়ের ফলে মিয়ানমার অবিলম্বে প্রত্যাবাসন চাইতে পারে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। অল্প কিছু রোহিঙ্গা নিয়ে আইসিজেকে বোঝানোর কৌশল নিতে পারে মিয়ানমার। তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয় বাংলাদেশের।

এখানে সহায়ক পরিবেশ এবং রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরির জায়গায় আমাদের শক্তিশালী হতে হবে। কারণ আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন প্রত্যাবাসন শুরু হলেই শেষ হয়ে যায়। এখানে মিয়ানমারকে বিশ্বাস করা যায় না। সব সময়ই তারা কোনো না কোনো অজুহাত দেখিয়ে অন্য পথে ঘুরেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গাম্বিয়া বনাম মিয়ানমারের মামলায় গণহত্যার বিরুদ্ধে নেপিডোর আপিল বাতিল করতে আইসিজে-এর রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। বলা হয়, আইসিজে আইনি ও পদ্ধতিগত দিক থেকে মিয়ানমারের সব প্রাথমিক আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। এই রায় রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে সহায়ক হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশও বিশ্বাস করে যে আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে আস্থা তৈরি করবে।

নভেম্বর ২০১৯ সালে, আফ্রিকান দেশ গাম্বিয়া রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে। এতে মিয়ানমার আপত্তি জানায়, আইসিজেতে এই মামলা করার এখতিয়ার গাম্বিয়ার নেই। ১৯৪৮ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী সকল দেশেরই দায়িত্ব গণহত্যা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা। আইসিজে বলেছে, গাম্বিয়াও একই কাজ করেছে। মামলার শুনানির জন্য (আইসিজে) এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে মিয়ানমার। গণহত্যা সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ যখন গণহত্যার অভিযোগ আনে, তখন এই আদালতের তা শোনার এখতিয়ার রয়েছে।

চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের আবেদনের শুনানি করে আইসিজে। তার ভিত্তিতে গত শুক্রবার মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ করে দেয় জাতিসংঘের আদালত। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ করতে বা অপরাধীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থতার জন্য গাম্বিয়া ২০১৯ সালের নভেম্বরে আইসিজে-তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *