গরু-মহিষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ‘লাম্পি স্কিন’ রোগ।গরুর দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা
পবিত্র ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে দেশের গরু-মহিষে মশাবাহিত রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় লাম্পি চামড়া নামক রোগে আক্রান্ত গরু-মহিষের সংখ্যা বাড়ছে। গ্রাম থেকে গ্রামে বিশেষ করে বন্যাপ্রবণ এলাকায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এ রোগে পশুর পায়ের নিচের অংশসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা হয়। সুস্থ পশু কোরবানির ধর্মীয় বিধান থাকায় অনেকেই এ ধরনের পশু কিনতে চান না। তাই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গলদা চর্মরোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষকরা। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ এসব কারণে এবার কোরবানির পশুর দাম আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সারাদেশে গলদা চামড়ায় আক্রান্ত গবাদি পশুর সংখ্যা এখনো চূড়ান্ত করেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ৫০টি জেলায় অন্তত তিন লাখ গবাদি পশু আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় দুই শতাধিক গরু চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ৩০ হাজার গরু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয়জন মারা গেছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে গত তিন সপ্তাহে হাজার হাজার গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে (এলএসডি) আক্রান্ত হয়েছে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার দিঘলিয়া ইউনিয়নের কৃষক তাহের হোসেন জানান, তার খামারে ৩৬টি কোরবানির পশু রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি গলদা ত্বকের ভাইরাসে আক্রান্ত। তিনি বলেন, আক্রান্ত গরুর চামড়া নষ্ট হয়ে সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। এভাবে ঈদুল আজহায় কোনো ক্রেতা আহত গরু কিনতে চাইবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে গবাদি পশুর গলদা চর্মরোগের প্রথম কেস দেখা যায়। সাধারণত গ্রীষ্মের শেষের দিকে এবং বর্ষার শুরুতে মশার উৎপাতের সময় এই রোগটি ছড়ায়। সংক্রমিত প্রাণীর মৃত্যুর হার ১ থেকে ৩ শতাংশ। দেশের উত্তরাঞ্চলের গরুর হাটে এ ধরনের আক্রান্ত গরু উঠছে বলেও জানা গেছে। সংক্রমিত প্রাণী থেকে আরও অনেক প্রাণীতে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা জানান, রোগ প্রতিরোধে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন। আক্রান্ত পশুর রোগ প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। বৃষ্টি ও বর্ষা কমলে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আক্রান্ত পশুরাও সুস্থ হয়ে উঠবে।
এদিকে এ বছর ঈদের আগে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কায় ভুগছেন কৃষক-কৃষাণীরা। বন্যায় ঘরবাড়ি ও খামার তলিয়ে যাওয়ায় অনেকে পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। খাদ্যের অভাবে গবাদিপশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বন্যাপ্রবণ এলাকায় পশুখাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে। কারণ, নিমজ্জিত চারণভূমি থেকে গোখাদ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। পশুর নানা রোগ দেখা দিয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জিনাত সুলতানা জানান, ঈদের আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে ওইসব এলাকার কৃষকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এতে কোরবানির বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, সরকার আমাদের সহায়তা করলে গরুর দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমানো সম্ভব। গতবার এক লাখ টাকায় গরু কিনতে হলেও এবার অন্তত ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় কিনতে হতে পারে। অর্থাৎ দাম বাড়ছে ২৫ শতাংশ। শুধু গরুর খাদ্যের দাম বাড়ছে, বাড়ছে গরুর দাম। তবে এবার বন্যার কারণে কোরবানির বাজারের সব হিসাব এলোমেলো হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
এদিকে রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী পশুর হাটে দেখা গেছে নানা ধরনের পশু। প্রায় প্রতিদিনই হাটে পশুর সংখ্যা বাড়ছে। পশু রাখার জন্য বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আস্তাবল স্থাপন করা হয়েছে।