চালের বাজারে বিশৃঙ্খল।দেশব্যাপী অভিযান
অনেক চাল ব্যবসায়ী মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ মূল্য তালিকাও দেখাননি। অনেক ব্যবসার বৈধ লাইসেন্স নেই। কেউর থাকলেও মেয়াদ নেই। আবার কেউ কেউ বেশি লাভের আশায় অতিরিক্ত মজুদ রাখেছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বুধবার রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে চালের বাজারে অভিযান চালিয়ে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির চিত্র দেখেছেন।
এসব অপরাধের জন্য ঢাকার সাতটিসহ সারাদেশে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা জরিমানা এবং মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। খাদ্য ও ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এখন ধানের মৌসুম চলছে পুরোদমে। ফলে চালের দাম নাগালের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু বাজারে সে চিত্র দেখা যায়নি। বরং কয়েকদিন ধরেই দাম বাড়ছে। গতকাল কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ থেকে ১২ দিনে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মোটা চালের দামও কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দাম নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ মজুদ ঠেকাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সারাদেশে চালের বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুর, বাবুবাজার, হাতিরপুল ও মোহাম্মদপুর এলাকায় চালের দোকানে অভিযান চালানো হয়। মূলত ব্যবসায়ীদের কাছে খাদ্যশস্যের সনদ আছে কি না এবং অতিরিক্ত মজুদ আছে কিনা তা তদারকি করা হয়েছে। তাদের অনেকের লাইসেন্স ছিল না। কেউ কেউ করলেও তা নবায়ন করা হয়নি। সাধারণত ধান ও চালের ব্যবসা করতে হলে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে খাদ্যশস্যের সার্টিফিকেট নিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, এই সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ পাঁচ আউন্স চাল দোকানে রাখতে পারবেন না।
দোকান ছেড়ে ব্যবসায়ীরা পালিয়েছে : কারওয়ান বাজারে অভিযানে নেতৃত্ব দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মর্জিনা আক্তার। তিনি বলেন, অভিযানের খবর শুনে অনেক চাল ব্যবসায়ী দোকান ছেড়ে পালিয়ে যায়। অনেক ব্যবসায়ীর খাদ্যশস্যের লাইসেন্স ছিল না। যাদের আছে তাদের নবায়ন করা হয় না। তবে অবৈধ মজুদ পাওয়া যায়নি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হুরে জান্নাতের নেতৃত্বে হাতিরপুল বাজারে আরেকটি অভিযান চালানো হয়। চালের দোকানের লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। এখানেও অভিযানের খবর পেয়ে অনেক দোকানি পালিয়ে যায়।
যাত্রাবাড়ীর কাজলা ও কলাপট্টি এলাকায় অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল ও শরিফুল ইসলাম। তারা জানান, অনেক ব্যবসায়ী চালের মূল্য তালিকা দেখাননি। কেউ কেউ দাম তালিকার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ না করা এবং চড়া দামে বিক্রি করায় পাঁচটি কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়েছে।
বিধিনিষেধে প্যাকেটজাত কোম্পানি : গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, চাল সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে দাম বেড়েছে। আকিজ, সিটি, এসিআই, স্কয়ার, বসুন্ধরা, প্রাণের ৬টি গ্রুপে অতিরিক্ত চাল মজুদ পাওয়া গেছে। প্যাকেটজাত চাল বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় বাজার থেকে চাল কিনতে পারবে না বলে আইন করতে যাচ্ছে সরকার।
মন্ত্রী বলেন, গুদামে অতিরিক্ত চাল পাওয়া গেলে তা অবৈধ ঘোষণা করে গুদামটি সিলগালা করা হবে। এসব অপরাধে আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত থাকলেও ছাড় দেওয়া হবে না।
ঢাকার বাইরে দিনাজপুরে খাদ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে অভিযান চালিয়ে পাঁচ হাজার টনের বেশি চাল জব্দ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে চার দোকানদার, সিলেটে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই দোকানদার ও বরিশালে তিন দোকানদারকে জরিমানা করা হয়েছে। ফরিদপুরে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা ও ৪০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে কুষ্টিয়ার খাজানগর চাল মোকামে অভিযানে বড় কোনো মজুদ ও অনিয়ম প্রকাশ পায়নি। বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বগুড়ার আদমদীঘিতে দুটি মিল মালিককে জরিমানা ও একটি সিলগালা, ধুনটে একটি ও শিবগঞ্জে চারটি মিল মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। হবিগঞ্জে দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও একটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক হাজার টন মজুদ করার জন্য একটি কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়েছে।