চট্টগ্রাম।গমে সয়লাব, তবুও বাজার গরম

0

সয়াবিন ও পেঁয়াজের পর এখন গমের বাজারে আগুন। ভারত থেকে গম রপ্তানি বন্ধের অজুহাতে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সাত দিনে গমের দাম ২০০ টাকা বেড়েছে। ফলে আটার দামও বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ গমের চাহিদা রয়েছে, সেই গম ইতিমধ্যেই দেশের কাছাকাছি চলে এসেছে। দেশে প্রতিমাসে গমের গড় চাহিদা ৬ লাখ টন। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের হিসাব করলে এই চাহিদা দাঁড়ায় ৬২ লাখ টন। এ চাহিদার বিপরীতে ইতোমধ্যে গম পৌঁছেছে ৫৭ লাখ টনে। পাইপলাইনে রয়েছে আরও ৬ লাখ টন গম। তবু গমের বাজার সরগরম।

গত শনিবার ৫২ হাজার টন গম নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। গত সপ্তাহে ৫০,০০০ টন সরকারি গম নিয়ে আরেকটি জাহাজ এসেছে। ১ লাখ টন গম নিয়ে আরও দুটি সরকারি জাহাজ আগামী মাসে আসবে। এভাবে একের পর এক জাহাজ এলেও পর্যাপ্ত গম মজুত নেই। এ ছাড়া দেশে প্রতি মাসে গড়ে ৪ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়। এটা নিলে এখন আর গমের অভাব নেই। তাহলে প্রশ্ন হলো এত গম যাচ্ছে কোথায়?

ধানের পর গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। দেশে বছরে ৬৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় ১১ লাখ টন গম। বাকিটা আমদানি করা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে দেশে এসেছে ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার টন গম।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলমও মনে করেন, গম নিয়ে কোনো সংকট হবে না। তিনি বলেন, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পর্যাপ্ত গম আমদানি করা হয়েছে। ভারত রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা সাময়িক। ভারত থেকে গম আমদানিতে সরকারিভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বেসরকারি পর্যায়ে যারা চুক্তিতে পৌঁছেছেন তাদের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। এখন ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

চট্টগ্রামের খাদ্য ও পরিবহন নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, “এক লাখ ২০ হাজার টন গম নিয়ে দুটি জাহাজ চলতি মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। ১৬ মে নোঙর করা একটি জাহাজ। আমরা ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করার পর খালাস প্রক্রিয়া শুরু করেছি। শনিবার আরেকটি জাহাজ বন্দরে নোঙর করে। এ দুটি জাহাজে ১ লাখ ৫০ হাজার টন গম রয়েছে। অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই ১ লাখ টন গম নিয়ে আরও দুটি জাহাজ আসবে।

বিএসএম গ্রুপ দেশের অন্যতম শীর্ষ গম আমদানিকারক। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরী এর আগে বলেছিলেন, ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার আগে খুলে দেওয়া গম আসতে কোনো বাধা নেই। আমাদের ব্যবসায়ীরা ভারতীয় সরবরাহকারীদের সাথে যে গমের চুক্তি করেছে তার পরিমাণ প্রায় ৫০০,০০০ টন হতে পারে। এসব গম দেশে আনার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। রাশিয়া গম রপ্তানিতে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এর সুবিধাও নিতে হবে। ব্যাঙ্কগুলি এখন রাশিয়ান-উত্পাদিত গম আমদানি ক্রেডিট বন্ড নিষিদ্ধ করছে। এই জায়গা থেকে সরে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে আবার দ্রুত ঘাটতি পূরণ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *