চাঁপাইয়ে ১০ হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে
সিলেট ও সুনামগঞ্জের পর এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ জেলার গোমস্তাপুরে ১০ হাজার বিঘা জমির ধান এখন পানির নিচে। এদিকে সুনামগঞ্জে হাঁটু পানির কারণে ২৬টি বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেট নগরীর লাখ লাখ মানুষ। সুনামগঞ্জে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আটকা পড়েছে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সিলেট-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েকটি অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পানির নিচে ধান: জেলার গোমস্তাপুরে উজানের পানিতে ১০ হাজার বিঘা জমির ধান এখন পানির নিচে। মঙ্গলবার দুপুরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিলের কিছু ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এবং কিছু ধান কাটার পর মাটিতে পড়ে আছে।
স্থানীয়রা জানায়, সম্প্রতি উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিল কুজাইন ও চান্দের বিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও ভারতীয় অংশে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুই বিলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
হঠাৎ ধান তলিয়ে যেতে দেখে কৃষকরা কেঁদে ফেলেন। শ্রমিক সংকটের কারণে সময়মতো ধান কাটতে পারেননি তারা। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি কুজানঘাটে পুনর্ভবা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নিচু জমি থেকে দ্রুত ধান সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া বিল এলাকা থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় প্রতি বছরই এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তারা দ্রুত ড্রেজিং ও নদী, বিল ও খাঁড়িতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
সুনামগঞ্জে ২৮ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ: জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি না হলেও আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। আসাম-চেরাপুঞ্জির উজানে বন্যার পানি কমতে থাকায় জেলার ছাতমা ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমাসহ সব নদীর পানি উপচে পড়ে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টিতে সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
সিলেটে জলাবদ্ধতায় বাড়ছে দুর্ভোগ : জেলার উপশহর ও তেরতন, কানিশাইল, জাতরপুর, সোবহানীঘাট, চালিবন্দর, আখালিয়া, ঘাসিটুলা, তালতলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধ শতাধিক মানুষ জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছেন। এছাড়া সিলেটের ১৩টি উপজেলায় আটকা পড়েছেন আরও প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নৌকা এখন যাতায়াতের মাধ্যম। গ্রামের অনেক বাড়িতেই এখন পানি। পানির জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আখালিয়া নেহারীপাড়ার বাসিন্দা ইমরান আহমেদ তার এলাকার বেশির ভাগ বাড়িতে পানির কথা উল্লেখ করে বলেন, অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গেছেন। কেউ গেছে গ্রামের বাড়িতে।
সিলেটে বন্যা ও ক্ষতিগ্রস্তদের অবনতি দেখতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা চালিবন্দরসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিলেটের বন্যা কবলিত এলাকায় ২৫ লাখ টাকা ২০০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। ড.মোমেন বলেন, সরকার বন্যা দুর্গতদের পাশে আছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে ২৬৪টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, টানা বর্ষণে সিলেটে কয়েকদিন ধরে নদীর পানি বাড়ছে। কোনো কোনো এলাকায় তা কমেছে, আবার কোনো কোনো এলাকায় বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেট সদর, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর এলাকার মানুষ।