ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির প্রতি ডঃ ইউনূস: ১৬ বছরের মধ্যে প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে

প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “এটি একটি বাস্তব ও ঐতিহাসিক নির্বাচন হবে। ১৬ বছরের মধ্যে প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচন।”
তিনি আরও বলেন যে, পূর্ববর্তী কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে নির্বাচনগুলি ছিল “জাল ও কারচুপির”।
গতকাল সোমবার (১৩ অক্টোবর) রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য ফোরাম (ডব্লিউ-এফ-এফ) এর ফাঁকে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সাথে সাক্ষাতের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
দুই নেতা ফোরামে মূল বক্তৃতা দেন এবং পরে একটি বৈঠক করেন। সেখানে তারা সামাজিক ব্যবসা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং দারিদ্র্য মোকাবেলার কৌশল সহ পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেন।
সাক্ষাৎকালে, প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতি লুলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রপতি লুলা আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশে যাব।”
রাষ্ট্রপতি লুলা আরও বলেন, “ব্রাজিল তার নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে আগ্রহী, সামাজিক ব্যবসা এবং ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে আগ্রহী।” জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “এটা দারুন হবে।”
দুই নেতা গভীর সমুদ্রে মৎস্য চাষ, ওষুধ তৈরি – বিশেষ করে ভ্যাকসিন সাশ্রয়ী মূল্যের এবং পেটেন্ট-মুক্ত করার উদ্যোগ – জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা (আসন্ন ‘কপ৩০’ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে) এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে যুব-নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনের মতো বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা করেন।
ড. ইউনূস ব্রাজিলে তার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন, যার মধ্যে ২০০৮ সালে সেই দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সাথে একটি সাক্ষাৎ এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্রাজিলের প্রধান শহরগুলিতে তার সফর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সেই সময়, রাষ্ট্রপতি লুলা অধ্যাপক ইউনূসকে ‘কপ৩০’ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। জবাবে, প্রধান উপদেষ্টা আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন যে, তিনি ‘কপ৩০’-তে যোগ দিতে পারবেন না। কারণ সেই সময় তিনি বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকবেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। একই সাথে ড. ইউনূস বাংলাদেশে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের প্রতি তার আন্তরিক সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের মানুষ ব্রাজিলকে সমর্থন করে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন – খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ এবং পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। এছাড়াও, ব্রাজিল সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।