মহাসড়কের ওপর সরকারের মহাযন্ত্র তিনটি ভবন
রাজধানীর বনানীতে চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে মহাখালী ফ্লাইওভার। এই সড়কটি ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের শেষ অংশ। ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করার সময় প্রথম পর্ব। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে হাইওয়েটা এখানে এসে হঠাৎ একটু বাঁকে সরু হয়ে গেছে। প্রায় সব সময়ই যানজট লেগেই থাকে। ফুটপাতও সরু। কারণ, সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনটি প্রতিষ্ঠানের তিনটি বহুতল ভবন রয়েছে- পাঁচতলা বিশিষ্ট ঢাকা সড়ক বিভাগ অফিস, ১৫ তলাবিশিষ্ট বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবন এবং ১০ তলা বিশিষ্ট সেতু ভবন। তিনটি ভবনের কারণে রাস্তা প্রশস্ত করার সুযোগ নেই। ফলে এ মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন ফ্লাইওভারের মুখে আটকা পড়ে। ফ্লাইওভারে ওঠা যানবাহনগুলোকেও আটকে যেতে হয়। এসব যানজট কখনো কখনো বনানী ফ্লাইওভারের মতো দীর্ঘ হয়।
দেড় বছর আগে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম সেতু ভবন ও বিআরটিএ ভবন সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, বনানীর বিমানবন্দর সড়কের পাশে নির্মিত সেতু ভবন ও বিআরটিএ ভবনের কারণে এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে দুটি ভবন সরাতে হয়েছে। ওই দুটি বিল্ডিং সেখানে ধীরগতি করছে। সেখানে যারা এটা করেছে তারা পরিকল্পনা মাফিক করেনি।
এরপর থেকে আতিকুল ইসলাম ভবন দুটি উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তা সরানো হয়নি, উল্টো ওই দুটি ভবনের পাশেই নতুন করে তৈরি করা হয়েছে ঢাকা সড়ক বিভাগের কার্যালয়। এটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
আতিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ভবনগুলো অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কেউ না কাউকে ভুলতে হবে। সব সময় যানজট লেগেই থাকে। পূর্বাচল প্রকল্প চালু হলে কী হবে? ব্যবস্থা নিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা উত্তর দেয়নি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ আরও অনেককে জানাবো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিজয় সরণির ২৩ তলা র্যাংগস ভবনটিও অতীতে একই কায়দায় নির্মিত হয়েছিল।
আদালতের নির্দেশে সেখান থেকে ভবনটি সরিয়ে নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বর্তমানে সেখানে তেজগাঁও ওভারপাসের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। পরে একইভাবে হাতিরঝিল দখল করে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১১ সালে আদালত এটি অপসারণের নির্দেশ দিলে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে এটি ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু সেতু ভবন ও বিআরটিএ ভবন তার চেয়েও বেশি দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ফেরদৌস আহমেদ কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন চাইলে ভেঙে দিতে পারে। আমরা কিছু বলব না।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার তার কার্যালয়ে গেলে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (প্রশাসন) আজিজুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। রাজ্জাক। বিষয়টি আজিজুল ইসলামকে জানালে তিনিও কথা বলতে রাজি হননি। তিনি কোম্পানির পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শেখ মাহবুব ই রাব্বানীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। মাহবুব রব্বানী বলেন, ‘বিআরটিএ বা সেতু ভবনের কারণে যানজট হয় এটা ঠিক নয়। জাহাঙ্গীরগেট থেকে মহাখালী ফ্লাইওভারের মুখেও যানজটের সৃষ্টি হয়। ব্রিজ বিল্ডিং নাকি বিআরটিএ বিল্ডিং আছে? ‘
মাহবুব রব্বানী জানান, এসব ভবন নির্মাণের আগে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা সরকারের প্রকল্প পর্যালোচনা করে জানান যে এখানে বিআরটিএ ভবন নির্মাণে কোনো বাধা হবে না। এর পর ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এর পরেও সরকার যদি মনে করে র্যাংগস বা বিজিএমইএ ভবনের মতো এগুলো ভেঙে ফেলবে, সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। এখানে বিআরটিএর বলার কিছু নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহম্মদ খান বলেন, এ ধরনের রাস্তার পাশে কিছু জায়গা রেখে দেওয়া হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে রাস্তা প্রশস্ত করার প্রয়োজন হলে তা ব্যবহার করা যায়। অন্যথায় সেখানে সবুজায়ন করা হয়, যাতে প্রয়োজনে সার্ভিস রোড করা যায়। সে কারণে মহাখালী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রাস্তার পাশে এমন জায়গা রাখা হয়েছিল। কিছু কিছু জায়গায় এখনও আছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের মহাসড়ক আইনেও বলা আছে মহাসড়কের ১০ মিটারের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এই আইন লঙ্ঘন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয়। তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠানও আইন লঙ্ঘন করেছে।