বাংলাদেশ থেকে ফেরি কিনতে চায় ইরান

0

ইরানের টিটি তেজারাত গোস্তারেস কিস নামের একটি কোম্পানি কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে ৬টি ফেরি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এই রো-রো ফেরিগুলো কেনার প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিটির মূল প্রতিষ্ঠান দ্য কিস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে যাত্রীবাহী জাহাজ ভাড়া করতে চায় কোম্পানিটি।

ইরান ও কাতার পারস্য উপসাগরের দুই পাশে অবস্থিত দুটি দেশ। পারস্য উপসাগরের দৈর্ঘ্য ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার। কিস পারস্য উপসাগরের একটি দ্বীপ, মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। ২১ নভেম্বর কাতারে শুরু হবে ২২তম ফিফা বিশ্বকাপ। চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ পর্যটক কাতারে আসবেন। এই পর্যটকদের একটি অংশ কাতারের পাশাপাশি পারস্য উপসাগরের বিভিন্ন দ্বীপে ভ্রমণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পর্যটনের সম্ভাবনা এবং সমুদ্রপথে বিশ্বকাপ দেখার জন্য ইরানিদের কাতারে ভ্রমণের জন্য জলপথে বর্ধিত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি এই রো-রো ফেরিগুলি কেনার এবং যাত্রীবাহী জাহাজগুলিকে চার্টার করার কথা বিবেচনা করছে৷

সম্প্রতি তেহরানে দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর ড. চিঠিতে জুলিয়া মইন ব্যবসায়ীদের সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ এবং জাহাজ রপ্তানিকারক ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডকে ছয়টি ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ সরবরাহের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। তিনি চিঠিতে লিখেছেন, রো-রো ফেরিগুলোর ধারণক্ষমতা কমপক্ষে ২০০ জন এবং ৬০টি গাড়ি থাকতে হবে। যে জাহাজটি চার্টার্ড করা হবে তার ধারণক্ষমতা হবে ৩০০ থেকে ৫০০ জন। বিশ্বকাপের জন্য জাহাজটি ইরানের একটি কোম্পানি চার্ট করবে। তারা নিজেদের মতো করে জাহাজের নাবিক ও অন্যান্য কর্মীদের ব্যবস্থা করবে।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ইরানি কোম্পানি তেহরান দূতাবাসের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বাংলাদেশ থেকে ফেরির কারিগরি দিক ও দাম সম্পর্কে ধারণা নিতে চেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তাকে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিষ্ঠানটি আগ্রহী হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এর আগেও বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক ও পাকিস্তানে ফেরি সরবরাহ করা হয়েছে। সেখানে ফেরিগুলো ভালোই চলছে। বাংলাদেশী জাহাজ নির্মাতাদের নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্কে যাত্রীবাহী জাহাজ সরবরাহের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়া ভারতে বাল্ক ক্যারিয়ার এবং জার্মানিতে বহুমুখী জাহাজ রপ্তানি করা হয়েছে। ফলে ইরানের কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী ফেরি সরবরাহ করা কঠিন নয়।

জাহাজ রপ্তানিতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। দেশে কিছু সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ কোম্পানি গড়ে উঠেছে। যদিও গত দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিশেষ কোনো অর্ডার আসেনি। তবে করোনা পরবর্তী চাহিদা পরিবহনে গতি আনবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে সমুদ্রগামী জাহাজের নতুন অর্ডার বাংলাদেশে আসবে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৫ বছরে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ১৩ ধাপ এগিয়ে এবং বর্তমানে বিশ্বে ১৪তম স্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে দেশের কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগ করেছে। বেশ কয়েকটি গ্রুপের যৌথ বিনিয়োগে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ডেল্টা শিপইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। এই শিপইয়ার্ড থেকে বড় বড় পণ্যবাহী জাহাজ তৈরি হচ্ছে। জাহাজটির ধারণক্ষমতা তিন থেকে পাঁচ হাজার টন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *