ঈদযাত্রা।আনন্দযাত্রার পথে কাঁটা
জয়দেবপুরের ভোগড়া থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণের কাজ এখন শেষ অধ্যায়ে। এই মহাসড়কটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা, সময় লাগছে প্রায় ১০ বছর। গত শনিবার বিকেলে গাজীপুরের এবড়োখেবড়ো সড়কে মোটরসাইকেল যখন মহাসড়ক ছুঁল মনে হলো বিদেশি রাস্তা! মসৃণ, চকচকে রাস্তার মাঝখানে উঁচু ডিভাইডার। বিনা বাধায় যানবাহন প্রবেশ ঠেকাতে উভয় দিকে প্রতিবন্ধক তারপর ধীরগতির গাড়ির লেন।
ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের এই অংশের কাজ শেষ হলেও যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের হাটিকুমরুল-রংপুর অংশের নির্মাণকাজ চলছে। উন্নয়নকাজ করতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উন্নয়নও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জয়দেবপুর মোড়ের পর রাস্তা ভালো। তবে বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের কারণে প্রতিদিনই তীব্র যানজট হচ্ছে। যাত্রীদের কথায়, ‘নরকের মোড় হয়ে উঠেছে জয়দেবপুর মোড়।’
পদ্মা সেতু চালু না হলেও ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ায় এবারের ঈদে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের সড়কে তেমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হলেও প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে কুমিল্লা এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করার কাজও শুরু হবে। মহাসড়ক দুই লেনে থাকায় এবং বিভিন্ন সার্ভিস লাইন স্থানান্তরের কাজ চলমান থাকায় ঈদে সিলেট বিভাগের যাত্রীদের ভোগান্তি নিশ্চিত।
করোনার কারণে গত চার ঈদে অনেকেই গ্রামে যায়নি। করোনার গতি কমে যাওয়ায় সবাই মনে করছে এই ঈদে গ্রামের পথে পথে নেমে আসবে মানুষের স্রোত। এই রোজা, তার ওপর খুব গরম। ঈদ আনন্দযাত্রার টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি, যানজট সংকট, ভাঙা সড়কের পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কে যানজট মোকাবেলা করে আবারও বাড়ি ফিরতে হবে। ফলে ঈদের যাত্রীরা এখনই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সারাদেশে তিন হাজার পাঁচ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়ক ধ্বংসপ্রাপ্ত, যা দেশের সড়ক ও মহাসড়কের ১৬ শতাংশ। আগামী পাঁচ বছরে এই রাস্তাগুলি মেরামত করতে ২০ হাজার ১৪৯ কোটি কোটি টাকা প্রয়োজন। বিগত বছরগুলোতে রাস্তার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত বছর ৩ হাজার ৫৯১ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (আরএইচডি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ জাতীয় মহাসড়কের ৪৮৭ কিলোমিটার জাতীয় সড়কের দৈর্ঘ্যের প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩২ কিমি জাতীয় মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ বা যান চলাচলের অনুপযোগী। এর বিপরীতে দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ সড়কই ভালো। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের মহাসড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ অধিদপ্তরের (এইচডিএম) গত জুনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার (এসএসইসি-১) কাজ ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না। গাড়ি নির্দিষ্ট লেন অনুসরণ করবে, যানজট থাকবে না। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের আগে ওই মহাসড়কের পুরো কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।