ডলার খরচে সতর্ক বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশে ইতিমধ্যে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হয়েছে। যে হারে আমদানি বাড়ছে, রপ্তানি যে হারে বাড়ছে তার চেয়ে কম। এর মধ্যে আবারও রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে কমছে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে রয়েছে। আট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে ডলারের দাম কমাতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংকগুলোর মোট উন্মুক্ত অবস্থানের সীমা ছিল ২২৭ কোটি ।কিন্তু ব্যাংকগুলোর কাছে আছে মাত্র ৭৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ ক্ষমতার এক তৃতীয়াংশ ডলারে। বিদেশী বাণিজ্য নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকগুলি বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলির সাথে খোলে সেই ‘নস্ট্রো’ অ্যাকাউন্টগুলিতে অর্থ রাখা হয়। একটি ব্যাংক তার নিজের হিসাবে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রাখতে পারে তা সেই ব্যাংকের মূলধনের সাথে সম্পর্কিত। ব্যাঙ্কিং পরিভাষায় যা ওপেন পজিশন লিমিট হিসেবে বিবেচিত হয়। গত অর্থবছর এবং চলতি অর্থবছরের শুরুতে অনেক ব্যাংক তাদের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি ডলার ধরে রেখেছিল। উদ্বৃত্ত ডলার অন্য ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রায়ই নতুন রেকর্ড গড়ে উঠছিল। এখন বেচাকেনা দূরে থাক, প্রায়ই কিছু ব্যাংক ডলার কিনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় কমাতে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাইহোক, এই নির্দেশ যথেষ্ট নয়। ব্যাংকগুলো আয়ের জন্য বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নির্দেশনা অমান্য করে এলসি খুলছে কি না, তা দেখতে হবে। আবার, আমাদের দেখতে হবে আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং আছে কি না। আবার ব্যাংকের ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে যেন কোনো বড় ব্যবধান না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া বিদেশি পরামর্শকসহ অন্যান্য খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমানোর ওপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১১ এপ্রিল তারিখের একটি নির্দেশনায়, জ্বালানি, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ এবং অন্যান্য কিছু পণ্য ছাড়া সমস্ত সেক্টরে ন্যূনতম এলসি মার্জিন ২৫ শতাংশে উন্নীত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্বে, যেকোনো এলসির বিপরীতে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে মার্জিন নির্ধারণ করা হতো। আবার ৪ এপ্রিল এক নির্দেশনার মাধ্যমে ডলার বন্ডের সুদ কমিয়ে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সুদের হার কমানো হয়েছে। এতে সুদের খরচ কমবে। আরও ডলার বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে। এর আগে সরকার প্রবাসী আয় বাড়াতে ১ জানুয়ারি থেকে রেমিট্যান্সে প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশে উন্নীত করেছিল। এ ছাড়া রপ্তানি বাড়াতে নানা উদ্যোগ চলছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, সাধারণত ১০ শতাংশ মার্জিনে এলসি খোলা হয়। কিছু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাদ দিয়ে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ মার্জিনের প্রয়োজনের ফলে, আমদানি এখন কিছুটা তাড়াহুড়ো হবে। এ ছাড়া এখন আমদানিও কমবে।