সিংহের দেশে বাঘের রাজত্ব।দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়
রং খেলার দিন শেষ। প্রিয় দলের জয় দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজে জয়ে ১৭ কোটি বাঙালির হৃদয় লাল হয়ে গেছে। সেঞ্চুরিয়ান থেকে পলাশ পর্যন্ত লাল-সবুজের পতাকা উড়েছে। আফ্রিকার বিপক্ষে টাইগারদের জয় নেমে এসেছে ড্রেসিংরুমে। ইতিহাসের রচনায় গাওয়া হয় বিজয়ের গান, ‘আমরা জিতব… আমরা জিতেছি।’ সেন্ট কিটসে ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পর নিউজিল্যান্ডের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ে যেমন গাওয়া হয়েছিল।
সেঞ্চুরিয়নে ড্র দিয়ে শুরু হয়েছিল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ। সিরিজ নিজেদের করে নিতে মুখিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তারা তাদের স্বপ্ন পূরণে মরিয়া। তাসকিন আহমেদরা বোল্ড করে স্বাগতিকদের ১৫৪ রানে আউট করে, ভিতরের উত্তেজনা বজায় রেখে। বোলিংয়ে এঁকেছে জয়ের পথ। জয়ের জন্য ব্যাটসম্যানদের দিতে হয়েছে শুধু আনুষ্ঠানিকতা। তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস ১২৮ রানের জুটিতে দায়িত্ব পালন করেন। ১০ উইকেটে জিতলে ঐতিহাসিক জয়টা আরও রঙিন হতে পারত। লিটন কুমার দাস ৪৭ রানে আউট হন, সেখানে কিছু অপূর্ণতা রেখে যান। হয়তো ক্রিকেট দেবতার এই খেলা সাকিব আল হাসানকে ব্যাট করার সুযোগ দিতে। লিটনকে ড্রেসিংরুমে পাঠানো বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে বুদ্ধিমান হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। ম্যাচে ৯ উইকেটে অপরাজিত ছিলেন তামিম ইকবাল। বাউন্ডারি দিয়ে সাকিবের রান ১৮ রান।
বিশ্বকাপ সুপার লিগে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে বছর শেষ করল।
বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে এটা টাইগারদের সপ্তম সিরিজ জয় কিন্তু বড় দলের বিপক্ষে দ্বিতীয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর এবার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সিংহের দেশে বাঘের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই স্মরণীয় সিরিজের সমাপ্তি হল পরিপূর্ণতার সুন্দর ছবি দিয়ে। যেখানে তাসকিন আহমেদের ডানা মেলার ছবি আঁকা হয়েছে। সেই ছবি ভয়ঙ্কর সুন্দর, উইকেট পাওয়ার পর সবুজ ঘুড়িতে পরিণত হচ্ছে। তাসকিন আহমেদের এই উদযাপন পুরোনো হলেও নতুনত্বে ভরপুর। সেঞ্চুরিয়নে গতকাল পাঁচবার হাত ছড়িয়ে মুখে হাসি নিয়ে ছুটে যান সে দিকে। তাসকিনের পাঁচ উইকেটের আনন্দ ড্রেসিংরুম থেকে বাঙালির ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। কি চমৎকার একটি মুহূর্ত. লেখক হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকলে অনেক সুন্দর লিখতেন। গতকাল সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে সত্যিই কঠিন বোলিং করেছেন তাসকিন। তিনি পাঁচ উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের ১৫৪ রানে বেঁধে দেন।
তাসকিন পাঁচ উইকেট নিলেও বাকিরা খারাপ করেননি। একক হিসেবে পাঁচ বোলার বোলিং করেছেন। সবাই রান দিতে কৃপণ ছিল।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বনিম্ন স্কোর। আগের সর্বনিম্ন ছিল ১৬২ রান। ২০১৫ সালে, বাংলাদেশ মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রোটিয়াদের পরাজিত করে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এত ভালো পারফরম্যান্স এই প্রথম। জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডে বাদ দিয়ে, বাংলাদেশ এই বিশ্বকাপ সুপার লিগ সিরিজে ফেবারিট হিসেবে খেলেছে।