সন্দেহজনক লেনদেন তীব্রভাবে বেড়েছে

0

সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের রিপোর্টিং উচ্চ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিএফআইইউতে, ব্যাংক সহ বিভিন্ন রিপোর্টিং এজেন্সি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫,২৮০টি সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (এসটিআর) এবং সন্দেহজনক কার্যকলাপ রিপোর্ট (এসএআর) রিপোর্ট করেছে। আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৬৭৫। ইতিমধ্যে, স্বাস্থ্য খাতে ই-কমার্স জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বিএফআইইউ-এর সঙ্গে রেকর্ড ১,৪১৪ তথ্য বিনিময় করেছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৭৯ দশমিক ৬ ৭শতাংশ বেশি।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে এক মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। বিএফআইইউ প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ, বিএফআইইউ মহাব্যবস্থাপক এবিএম জহুরুল হুদা, ডিজিএম কামাল হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মাসুদ বিশ্বাস বলেন, সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ব্যাংকসহ রিপোর্টিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে সচেতনতা। এ ছাড়া ই-কমার্সে প্রতারণার অভিযোগ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক খবর এসেছে। প্রতিবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধিতে এগুলোর প্রভাব পড়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএফআইইউ প্রধান বলেন, অর্থ পাচারের তথ্য জানা গেলেও আন্তর্জাতিক সংস্থার বিধিনিষেধের কারণে তা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তা প্রকাশ করা যাবে না। কত টাকা পাচার হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্যও নেই বিএফআইইউর কাছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা পাচারের ঘটনা নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগমন্ট গ্রুপের সদস্য। বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে তথ্য প্রকাশের কারণে বেশ কয়েকটি দেশ সদস্যপদ হারিয়েছে। তিনি বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে ডিজিটাল করা হচ্ছে। এতে নতুন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় বিএফআইইউ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে আসছে।

বিএফআইইউ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাবরের মতোই বেশির ভাগ এসটিআর এসেছে ব্যাংক থেকে। ২২০০-২১ অর্থবছরে, ব্যাংকগুলি একাই ৪,৪৯৫টি অভিযোগ দায়ের করেছে। আগের অর্থবছর যা ছিল দুই হাজার ৯০৮টি। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসটিআরের সংখ্যা ৫৭ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০-তে। তবে বীমা কোম্পানিগুলো ২০১৯-২০ অর্থবছরে চারটি প্রতিবেদন দিলেও কোনো সন্দেহজনক প্রতিবেদন দেয়নি।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ টাকার বেশি জমা বা উত্তোলন করা হলে, নগদ লেনদেন রিপোর্টিং বা সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে করতে হবে। এবং পরিমাণ যাই হোক না কেন, কোনো লেনদেন নিয়ে সন্দেহ থাকলে তা এসটিআরের হিসেবে জানাতে হবে। এসটিআরের সাথে সিটিআরও বেড়েছে। গত অর্থ বছরে ব্যাংকগুলো ২ কোটি ৬ লাখ সিটিআর করেছে। যেখানে টাকার পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬২১ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএফআইইউ সারা বিশ্বের এফআইইউকে তথ্যের জন্য ১৯১টি অনুরোধ পাঠিয়েছে। আগের অর্থ বছরে ১০৩টি পাঠানো হয়েছিল। গত পাঁচ আর্থিক বছরে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতীয় নির্বাচনের আগে সর্বাধিক ৩৮৮টি ডেটা পাঠানো হয়েছিল। গত অর্থ বছরে অন্যান্য দেশ থেকে তথ্যের জন্য ২২টি অনুরোধ করা হয়েছে। আগের আর্থিক বছরে যা ছিল ১৮টি। গত পাঁচ আর্থিক বছরে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ৩৪টি আবেদন এসেছিল। বিএফআইইউ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তথ্য আদান-প্রদানে একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *