তদন্তের দুর্বলতা কেন আগে নজরে আসে না

0

আবারও হাই-প্রোফাইল মামলায় তদন্তের দুর্বলতা আদালতের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সামনে এসেছে। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর গভীর রাতে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে পুরান ঢাকার হোসেনী ভবনে বোমা হামলার ঘটনা। এতে দুইজন নিহত ও অন্তত ১০০ জন আহত হয়। ঠান্ডা যুদ্ধ নামে পরিচিত। দীর্ঘ ছয় বছর পর মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার রায় এলো। বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে মাস্টারমাইন্ডরা আইনের বাইরে চলে গেছে। এর আগেও রায়ের সময় বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে দুর্বলতার বিষয়টি উঠে আসে। এমনকি রায়ের সময় তদন্ত ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ত্রুটির কথাও সামনে এনেছেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বলছে, মামলার তদন্তে বড় ধরনের কোনো দুর্বলতা থাকলে তা রায়ের আগে লক্ষ্য করা যাবে। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অসম্পূর্ণ প্রতিবেদনে মন্তব্য করতে পারেন এবং পুনরায় তদন্তের জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন। আবার, আদালতের এখতিয়ার রয়েছে যে অভিযোগ গঠনের সময় বা বিচার চলাকালীন পুলিশ প্রতিবেদনে কোনো দুর্বলতা প্রকাশ পেলে নিজ উদ্যোগে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়ার। কারণ অসম্পূর্ণ প্রতিবেদনের আলোকে আসামিরা সুযোগ নিতে পারে। তবে আগের তদন্তে বিষয়গুলো সামনে আসার নজির কম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এটা ঠিক। আমরা এখানে অনেক সময় দেখেছি। রায় ঘোষণার সময় তদন্তের দুর্বলতাগুলো সামনে আসে। বিচারকও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। মূল পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা যায়নি বলে অভিযোগ। তবে 100% ন্যায়বিচারের জন্য যা করা উচিত তা হল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বিচার চলাকালীন প্রতিবেদনে কোনো ত্রুটি বা বিচ্যুতি থাকলে বিচারক নিজ উদ্যোগে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। অসম্পূর্ণ প্রতিবেদনের আলোকে রায় দিলে শতভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় না।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তদন্তের দুর্বলতা ছাড়াও বিচারে বিলম্ব, সাক্ষীর অনুপস্থিতি, সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ভিকটিমকে হয়রানি করা, সাক্ষ্য হারানো, যথাযথ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিতে না পারা, কথা বলা। প্রসিকিউশনের বিরুদ্ধে, বাদী-বিবাদী গোপন চুক্তি বিচারিক প্রক্রিয়া এবং রায়কে প্রভাবিত করে। চার বছর আগে মামলার সাজা অনুপাত বিশ্লেষণ করে পুলিশ সদর দফতর। এতে বলা হয়, নারী নির্যাতনের মামলায় ৯৫ শতাংশ আসামি খালাস পাচ্ছেন। এছাড়া ধর্ষণ মামলায় ৮ শতাংশ আসামি, দ্রুত বিচার মামলায় ৬ শতাংশ এবং হত্যা মামলায় ৬ শতাংশ আসামি খালাস পাচ্ছেন।

পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে কোনো মামলার সাক্ষ্য সাক্ষী, প্রসিকিউশন ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করে। এর জন্য আরও ভালো সমন্বয় প্রয়োজন। এই তিন পক্ষের যৌথ উদ্যোগে আদালতে মামলা প্রমাণিত হলে মামলার মান বাড়বে। এতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।

বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, “ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অস্বচ্ছ তদন্ত রোধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে সমাজে বাস করি, সেই সমাজে ধনী এবং ক্ষমতাবানরা কিছু ক্ষেত্রে অনাক্রম্যতা পায়।অপরাধ করার পরও তারা প্রভাব বিস্তার করে সহজেই তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যায়।অনেক মামলা রয়েছে যেখানে পুলিশ,অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা,ডাক্তার,বিশেষজ্ঞরা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট দিয়ে অপরাধীদের সাহায্য করেছে। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আর্থিকভাবে প্রভাব বিস্তারের জন্য অনেক সময় তারা বেআইনিভাবে তা করে থাকে।এভাবে অসৎ ও উদ্দেশ্যমূলক তদন্ত কার্যক্রম চলতে পারে না।প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীকে অবশ্যই দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি করতে হবে।

এছাড়া রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বক্তব্য পরিবর্তনের দায়ে পুঠিয়ার তৎকালীন ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *