যানজটে নাভিশ্বাস

0

ময়মনসিংহে যানবাহনে ওঠার চেয়ে হেঁটে যাওয়া ভালো। যানজটের কারণে দেশের এই দ্বাদশ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। নগরীর মধ্য দিয়ে রেললাইন ও একাধিক বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করায় যানজট তীব্র হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রাচীন নগরীর মূল সমস্যা দূর করার দাবি নাগরিকদের। নগর পরিবহন চালু করে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে বলে অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন।

সরেজমিন পরিদর্শন ও নগরবাসীর বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশন হওয়ায় জনগণের চাপ বাড়লেও গত ২০ বছরেও শহরের সড়কগুলো প্রশস্ত করা হয়নি। ফলে সরু সড়কে যানজট বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই যানজট বেড়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড, পাটের গুদাম বাসস্ট্যান্ড, মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড। শহরে বাস ঢুকলে যানজট বাড়ে। ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, মোটা চাকার রিকশা (মিশুক), পাতলা চাকার রিকশাগুলো শহরে যাত্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নগরীতে ৬ হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছে। মোট ১২,০০০ রিকশা রয়েছে যার মধ্যে ৫ম৭০০ মোটা চাকা যার চারটি ব্যাটারি রয়েছে। বাকিগুলো পাতলা চাকা। আসলে নগরীতে এর কয়েকগুণ বেশি যানবাহন রয়েছে। শহরের রাস্তা প্রশস্ত না হলেও ফুটপাত দখল হয়ে আছে। পার্কিং ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে যানজট বাড়ছে।

শহরের অভ্যন্তরে রেলপথে যানজটের মাত্রা বেড়েছে। প্রতিনিয়ত রেলক্রসিং আটকে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ময়মনসিংহ জংশন থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ-জামালপুর, ময়মনসিংহ-ভৈরবসহ বেশ কয়েকটি রুটে ট্রেন চলাচল করে। ময়মনসিংহ জংশনে প্রবেশের জন্য ট্রেনগুলোকে শহরের সানকিপাড়া, সিকে ঘোষ রোড, সাহেব আলী রোড, বলশপুর, পাট গোদাম, ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডসহ অন্তত ২২টি রেলক্রসিং অতিক্রম করতে হয়।

বর্তমানে অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় বাসস্ট্যান্ডটি নগরীর পাট গুদাম সেতু মোড় এলাকায়। এখান থেকে গাড়ি ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আসে। বাস ছাড়াও সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা এবং ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাও স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ট্রাকের কোনো স্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তার যত্রতত্র ট্রাকগুলো দাঁড় করানো হয়। নগরীর পাটের গুদাম এলাকার একটি অংশ স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও শেরপুর এলাকা থেকে শহরে প্রবেশ করতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব এলাকা থেকে রোগীদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে যানজটের কারণে অ্যাম্বুলেন্সে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তর করে নির্দিষ্ট ট্র্যাক স্ট্যান্ড নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অন্যান্য স্ট্যান্ড সরানোর পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।

নিরাপদ সড়কের আন্দোলন (নিসকা) ময়মনসিংহের সভাপতি আব্দুল কাদির চৌধুরী মুন্না বলেন, নাগরিকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। যত্রতত্র ট্রাক দাঁড় করায় দুর্ঘটনাও ঘটছে। ট্রাক স্ট্যান্ড ও বাসস্ট্যান্ড অপসারণের উদ্যোগ শুভকামনা। তবে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি মো. শওকত হোসেন বলেন, যানজট নিরসনে আধুনিক শহরে নগর পরিবহন চালু করা হচ্ছে। কিন্তু প্রাচীন এই শহরে কোনো নগর পরিবহন নেই। তাই ছোট গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে; সেই সঙ্গে যানজট। নগর পরিবহন চালু হলে যানজটের সমস্যা অনেকটাই কমানো যাবে।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, সীমিত জনবল দিয়ে অতিরিক্ত ডিউটি ​​করে যানজট নিরসনের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে যানজট নিরসনে সড়ক বিভাগ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসনকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। শহরে ইজিবাইকের সংখ্যা ধারণক্ষমতার বাইরে। এগুলোও নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, পাটের গুদাম বাসস্ট্যান্ডের যানজট পুরো নগরীকে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড ও মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড অন্যত্র করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন স্ট্যান্ড হলে অনেক সুবিধা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *