সার্চ কমিটির সামনে নিরপেক্ষতার চ্যালেঞ্জ
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সভাপতি করা হয়েছে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে।
নিয়মানুযায়ী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে হবে। কিন্তু বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র ৯ দিন বাকি। কমিটির দুই দিন ছুটি থাকায় সাত কার্যদিবস রয়েছে। এ সময় তাদের নিজেদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ, রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়, সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের খোঁজসহ নানা কাজ করতে হয়। ইসিতে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ লোক খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
এই সময়ের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটিকে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ ‘নিরপেক্ষ ও যোগ্য’ ব্যক্তির নাম সুপারিশ করতে হবে। এই ১০ জনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ৫ জনকে নিয়োগ দেবেন, যাদের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১২ সালের সার্চ কমিটির সময় ছিল ২৩ দিন; এবং ২০১৭ সালে ১৫ দিন পেয়েছিল।
প্রতিবারই নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে নানা জটিলতা থাকলেও দেশে প্রথমবারের মতো কোনো আইনে কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে। এই আইনের সীমাবদ্ধতা থাকলেও তদন্ত কমিটির কাজ স্বচ্ছ হবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা। সার্চ কমিটি গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি বলেছে, এর কোনো মূল্য নেই। এটা জনগণের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বলেছে, আইন মানা হয়নি।
সার্চ কমিটির প্রধান ওবায়দুল হাসান অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, নতুন ইসি হবে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের অনুমোদনের পর গতকাল সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নবগঠিত কমিটির অন্য পাঁচ সদস্য হলেন হাইকোর্টের বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান (প্রধান বিচারপতি মনোনীত), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী (পদাধিকার বলে), সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন (পদাধিকার বলে) প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হুসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এর আগে ইসির নিয়োগ সার্চ কমিটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই সময় নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন তিনি। কারণ এর আগে তারা এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করেছেন।
কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করেননি বলে জানান তিনি। তবে তিনি সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে রোববার (আজ) বৈঠকে বসার চেষ্টা করবেন।
ওবায়দুল হাসান বলেন, আগের দুটি সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। তাদের সঙ্গে আবারও আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দীর্ঘদিন ধরে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ইসি গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি ছিল। আইনের অভাবে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সময় থেকে সার্চ কমিটি গঠন করা হয় এবং নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, যা বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদকে অনুসরণ করে। আগের দুটি সার্চ কমিটি গঠনের সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন রাষ্ট্রপতি। তবে গত দুই সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে-বিদেশে তুমুল বিতর্ক থাকায় এবার নিজেকে এ প্রক্রিয়ার বাইরে রাখছে বিএনপি। তারা এবার বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নেননি। এখন তারা নির্বাচন-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি করছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটিতে একজন নারী ও সাংবিধানিক পদাধিকারীসহ সুশীল সমাজের দুই সদস্য রয়েছেন। সবাই স্বীকার করবেন যে তারা অতীতে অত্যন্ত সম্মানিত ও নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন।