রাসেল ভাইপার সম্পর্কে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা

0

বিষাক্ত সাপ রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। শনিবার পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা দীপঙ্কর বার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দেশের বিভিন্ন স্থানে রাসেলের ভাইপার (চন্দ্রবোরা, বোরা বা উলুবোরা) দেখার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এবং ক্রমবর্ধমান জনসাধারণের উদ্বেগ সম্পর্কে সচেতন, বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, জননিরাপত্তা জনকল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

যদিও রাসেলের ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এই সাপের সাথে মানুষের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সাপ সাধারণত নিম্নভূমির তৃণভূমি, ঝোপঝাড়, খোলা বন, কৃষি এলাকায় বাস করে এবং মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। সাপটি ম্যাট রঙের এবং সহজেই মাটির সাথে মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে গেলে বিপদের ভয়ে সাপ আক্রমণ করবে। রাসেলের ভাইপার ভালো সাঁতারু এবং নদীর স্রোত বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

সাপের কামড় এড়াতে যা করবেন

*যেসব এলাকায় রাসেলের ভাইপার দেখা গেছে সেখানে গাড়ি চালানোর সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন।

* লম্বা ঘাস, ঝোপ, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। গর্তে পা ঢুকাবেন না।

* সংলিষ্ঠ স্থানে কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরুন।

*রাতে ভ্রমণের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে।

* বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার আবর্জনামুক্ত রাখুন।

*পতিত গাছ, জ্বালানি কাঠ, খড় সরানোর সময় বিশেষ যত্ন নিন।

* সাপ দেখলে ধরার বা মারার চেষ্টা করবেন না।

*প্রয়োজনে ন্যাশনাল হেল্পলাইন 333 নম্বরে কল করুন বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসে জানান।

সাপে কামড়ালে কি করবেন

* কামড়ানো অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না। পা ঝুলিয়ে, বসতে হবে, হাঁটতে পারবেন  না। হাতের কামড়ে, হাত সরানো যাবে না। হাত পায়ের জয়েন্টের নড়াচড়ায় মাংসপেশির সংকোচনের কারণে দ্রুত রক্তের মাধ্যমে বিষ ছড়িয়ে পড়ে এবং বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

* আক্রান্ত স্থানটি আলতো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে বা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছতে হবে।

* ঘড়ি বা অলংকার বা তাবিজ, কাপড় ইত্যাদি খুলে ফেলুন।

*কামড়ের জায়গায় কাটবেন না, সুই ফোটাবেন না বা কোনো ধরনের মলম বা অন্য কোনো কিছু প্রয়োগ করবেন না।

* সাপে কামড়ালে ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না।

* যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান।

*আতঙ্কিত হবেন না, রাসেলের ভাইপার অ্যান্টিভেনম নিকটতম সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম রয়েছে এবং সব জায়গায় হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

রাসেলের ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে পদক্ষেপ

বেজি, গুইসাপ, বাগদাশ, গণ্ডগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, টিলা নাগ ঈগল, সারস, মদন টাক এবং কিছু প্রজাতির সাপ রাসেলে ভাইপার খায় এবং তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। মানুষ কর্তৃক নির্বিচারে এসব বন্যপ্রাণী হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেলস ভাইপার বাড়ছে। তাই অপ্রয়োজনীয় বন্য প্রাণী হত্যা এবং তাদের আবাসস্থল ধ্বংস এড়িয়ে চলুন।

উল্লেখ্য যে রাসেলস ভাইপার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ধারা ৬(১) এর অধীনে একটি সংরক্ষিত প্রাণী। রাসেলের ভাইপাররা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ তারা খাওয়ার মাধ্যমে ফসল রক্ষা করে। ইঁদুর এই সাপের বিষ থেকে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়। সাপ মারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সাপ মারা থেকে বিরত থাকুন।

পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ বন বিভাগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সচেতন মহলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। পরিস্থিতি সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আপডেট প্রদান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *