বীরকন্যা প্রীতিলতার ৯১তম আত্মত্যাগ দিবস আজ
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৯১তম শাহাদত দিবস আজ। ৯১ বছর আগে ১৯৩২ সালের এই দিনে মাস্টারদা সূর্য সেনের ঘনিষ্ঠ কমরেড প্রীতিলতা চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলার নেতৃত্ব দেন। হামলার পর আহত অবস্থায় ফেরার পথে পুলিশের হাতে গ্রেফতার এড়াতে তিনি পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
প্রীতিলতা ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পঙ্কজ চক্রবর্তী বলেন, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী বীরাঙ্গনা প্রীতিলতাকে মানুষ আজও শোকে স্মরণ করে।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের শাহাদত দিবস উপলক্ষে প্রীতিলতা ট্রাস্ট, পটিয়া গৌরব সংসদের উদ্যোগে রবিবার বিকেলে ধলঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ সামুড়া গ্রামে প্রীতিলতার গ্রামের বাড়ির বাস্তুভিটায় তার আবক্ষ মূর্তি পুষ্পার্ঘ্য অর্পণসহ নানা কর্মসূচি পালিত হবে। পটিয়ার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ধলঘাটে প্রীতিলতা ট্রাস্টের উদ্যোগে দিনব্যাপী চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজী পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ভিত্তি তৈরি করতে গিয়ে সারা বিশ্বে যে বিপ্লবীরা মৃত্যুকে হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন, সেই অমর সন্তানদের একজন হলেন চট্টগ্রামের পটিয়ার প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
খাস্তগীর ইংলিশ হাই স্কুলে পড়ার সময় বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ফাঁসির কথা জানতে পারেন ড. চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের সংগ্রামী জীবনের অনেক ঘটনা তার কিশোর মনে প্রতিফলিত হয়েছিল।
প্রীতিলতা ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ সামুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার।
তিনি চট্টগ্রাম পৌরসভার কর্মকর্তা ছিলেন। মায়ের নাম প্রতিভা ওয়াদ্দেদার। ছয় ভাইবোনের মধ্যে প্রীতিলতা ছিলেন দ্বিতীয়। প্রীতলালের ডাক নাম রানী। ডাক নাম ফুলতার।
জানা যায়, ড. প্রীতিলতা ১৯২৭ সালে খাস্তগীর গার্লস হাই স্কুল থেকে লেটার মার্ক নিয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ইডেন মহিলা কলেজে। সেখানে পড়াশোনা করার সময় থেকেই বিপ্লবী সংগঠনে যোগ দেন এই নায়িকা। তিনি সম্মিলিত মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান এবং মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে ১০২৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএ পাস করেন। এরপর তিনি ১৯৩২ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক হন। এই কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি বিপ্লবী দলের মেয়ে ও ছাত্রদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এবং ১৯৩২ সালে তিনি চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং নন্দনকানন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন।
প্রীতিলতা ট্রাস্টের কর্মকর্তারা বলেন, প্রীতিলতার মতো বিপ্লবী দেশপ্রেমিক শতবার ফিরে আসুক। বীরকন্যা প্রীতিলতার সাহসী চেতনা, সংগ্রামী জীবন এবং দেশপ্রেমিক চেতনা বর্তমান প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠুক।