‘এক সপ্তাহ আগে আমার সব ছিল, এখন আমি নিঃস্ব’

0

“এক সপ্তাহ আগেও আমার সবকিছু ছিল। কিন্তু এখন আমি নিঃস্ব। কারও কাছে কোনো দিন হাত পাততে হয়নি। কিন্তু এখন আমার কিছুই নেই। বন্যায় দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে; বাড়িও ভেঙ্গে গেছে। আমার পাঁচ সদস্যের পরিবার অন্যের সহায়তায় ছুটছেন।চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়নের কৃষক হেকমত আলী বিষন্ন মুখে এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, অন্যের জমিতে সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।গরু পালন করেন, পুকুরে মাছ ছিল।পরিবার নিয়ে তিনি মোটামুটি স্বচ্ছল জীবন যাপন করতেন।কিন্তু সাম্প্রতিক কালে অবিরাম বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় তার ৩০ একর সবজি ভেসে গেছে।তার সাথে তার বসতভিটাও মাটিতে ভেসে গেছে।

হেকমত আলীর মতো একই উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের মুদি দোকানদার আব্দুর রউফও বানের পানিতে সর্বস্বান্ত  হয়েছেন। তিনি জানান, বন্যায় তার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গরু মারা গেল। তার বাড়ির পানির পাইপও ভেঙে গেছে। এখন তার পরিবারকে ত্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

শুধু এ দুজন নয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের পানিবন্দী হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা লাখের বেশি। সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, চকরিয়া ও মহেশখালীতে মাটির ঘর বেশি হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে বেশি। এত বছর বন্যা থাকলেও স্থানীয়দের কাছে এসব বাড়ি নিরাপদ মনে হচ্ছে। কিন্তু এই বন্যা তাদের সব ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। টানা চার দিন পানি জমে থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাটির ঘর। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, ঘরের সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।

বন্যায় উপজেলার প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির ধান, বীজ ও সবজির ক্ষেত বিলীন হয়েছে। এতে ৯টি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার কৃষক ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। উপজেলা আমিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ইউনুস জানান, ওই এলাকার দুই শতাধিক পুকুর ও মাছের খামার এবং ১০টি মুরগির খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

সাতকানিয়া, চকরিয়া অংশেও একই চিত্র দেখা গেছে।বন্যায় উপজেলার অন্তত ১৫টি ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। গত শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণকালে চকরিয়ার দুর্গত এলাকার রাস্তাঘাট ও বাঁধ মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দের আশ্বাস দেন। পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা জানান, এই বন্যায় চকরিয়া উপকূলের সাতটি ইউনিয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন কোনো পরিবার নেই যার ঘর বন্যায় প্লাবিত হয়নি। এছাড়া বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ায় চাষাবাদও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, এই বন্যায় তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। মাটির ঘর সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। ফসলের মাঠও নদীতে ভেসে গেছে। এখন কোথায় থাকব, কী খাব জানি না।

চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের আনসার ভিডিপি সদস্য মো. হারুন বলেন, বনের পানিতে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার টিনের ঘর সম্পূর্ণ মাটিতে চাপা পড়ে আছে। পকেটে টাকা নেই। খাবারের ব্যবস্থা নেই। সামনের সময়টা কিভাবে কাটাবো জানিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *