বন্যা বিধ্বস্ত পাহাড়ে দুর্ভোগ
বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নিচু এলাকা ছাড়া অধিকাংশ জায়গা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। ক্ষয়ক্ষতির ভয়ঙ্কর চিহ্ন ধীরে ধীরে এতে দৃশ্যমান হচ্ছে। পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি বরং বেড়েছে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের বিভিন্ন দুর্গম বন্যা কবলিত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনী, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
চট্টগ্রামে বৃষ্টি না হলেও রোদ নেই
নগরীর নিচু এলাকা থেকে বন্যার পানি অনেকটাই কমে গেছে। তবে মানুষের দুর্ভোগ পুরোপুরি শেষ হয়নি। টানা পাঁচ দিন ধরে নিচু এলাকার অধিকাংশ বাড়ি-ঘর ও দোকানে পানি জমে ছিল। পানি কমার পর এখন কাদায় ঢেকে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। ভিজা মাল শুকানোর চেষ্টা করছে ভিকটিমরা। কিন্তু সূর্য না উঠায় মাল শুকানো যায় না।
এদিকে গতকাল বৃষ্টি না হলেও চট্টগ্রামে তেমন রোদ ছিল না। অনেক এলাকা কয়েকদিন বিদ্যুৎবিহীন ছিল। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে।
রাঙামাটির নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত
জুরাছড়ি উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, বিলাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন ও বরকল উপজেলার ক্ষয়ক্ষতি কমতে শুরু করেছে। তবে নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত। অন্তত দুই হাজার মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে এবং এক হাজার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। দুর্গত মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যার কারণে রাঙামাটির ১০টি উপজেলায় ৩ হাজার ১৩৫ দশমিক ৫৫০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৩৬ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর ও জুরাছড়িতে ২ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির ফসল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বান্দরবানের ধসে বহু রাস্তাঘাট বিলীন হয়ে গেছে
ভূমিধসের কারণে রুমা ও থানচি উপজেলার সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোনো রাস্তার চিহ্ন নেই। রুমা-থানচি উপজেলা এখনও জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়নি। রুমা ও থানচি সড়কে কবে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে তা জানা যায়নি।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, চিম্বুক সড়কের মিলনছড়ি এলাকার পাঁচটি স্থানে মাটি ধসে সড়কে স্তূপ হয়ে গেছে। আর্মি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের ২০ ইসিবি খননকারক দিয়ে রাস্তার মাটি সরানোর জন্য কাজ করছে। আট মাইল এলাকার কোথাও কোথাও পাহাড়ের মাটি দিয়ে রাস্তার স্তূপ। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি মাটিতে পড়ে গেছে। থানচি সড়কের ৩০ কিলোমিটার এলাকায় পুরবাংলা নামক স্থানে সড়কের ওপর পড়ে আছে বড় বড় মাটির পাত্র ও বড় বড় পাথর। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা যায়, ভূমিধসে রাস্তার একটি বড় অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার ভূমিধসে সড়কটি বিধ্বস্ত হয়। থানচির পাহাড়ি পাকা রাস্তাও ভূমিধসের কারণে হারিয়ে গেছে। রুমা সড়কের দালিয়ানপাড়ার প্রায় দুই কিলোমিটার আগে তিনটি স্থানে ভূমিধসে সড়কটি ভেঙে গেছে। রোয়াংছড়ি উপজেলার সড়কের অনেক স্থানে ভূমিধসের কারণে সড়কে মাটি পড়ে গেছে। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি, বন্যার পানি ও ভূমিধসে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমির ফসল। কতগুলো সড়ক ধ্বংস হয়েছে তা এখনো নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শিগগিরই নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
লামায় ১ হাজার ৯২০টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি ও ভূমিধসে একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের এক হাজার ৯২০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ৩৫ টন চাল ও তিন কিস্তিতে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
এদিকে লামায় ভূমিধসের কারণে বাড়ির মাটির দেয়াল ধসে রাজিয়া খাতুন নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে ডুবে উমাচিং মারমা নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বন্যা ও ভূমিধসে আহত ২৫ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।