দালালের প্রলোভন।ভূমধ্যসাগরে থেমেছে নরসিংদী থেকে ইতালিগামী ৯ যুবকের যাত্রা
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবির ঘটনায় নরসিংদী থেকে ৯ যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। তারা উপজেলার নারায়ণপুর, চারুজিলাব ও সররাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। গত বুধবার মধ্যরাতে তাদের বহনকারী নৌকাটি ডুবে যায়। দালালের প্রলোভনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের ইতালি যাত্রা মাঝ সাগরে থেমে যায়। কয়েক মাস আগে উপজেলার ১৩ যুবক ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়।
গতকাল শুক্রবার এ খবর পৌঁছার পর নিখোঁজ ৯ যুবকের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, উপজেলার দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে লিবিয়া প্রবাসী জাকির হোসেনের মাধ্যমে তাদের ইতালি যাওয়ার অলিখিত চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী তারা প্রত্যেকে জাকিরের বাবা লাল মিয়া ও চাচা শাহিনুরকে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা দেন।
নিখোঁজরা হলেন, উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছ মিয়া (২০), একই গ্রামের হাছেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন কামাল (৩৫), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে মনির হোসেন (২২)। রবিউল (৩৩) একই গ্রামের মোতালিব মিয়ার ছেলে মো. , ভাটেরচর গ্রামের হাছেন উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (৩৫), তান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), দড়িকান্দি গ্রামের আবু রায়হান (৩০), সল্লাবাদ ইউনিয়নের নীলখিয়া গ্রামের আমান মিয়া (২৫) ও আলমছ। চারুজিলাব ইউনিয়নের দেওয়ানেরচর ফরাজী গ্রামের আলী। ইমন মিয়া (২০)। এর আগে গত জুনে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে একটি ট্রলার ডুবে ১৩ যুবক নিখোঁজ হয়। আজ পর্যন্ত তাদের খোঁজ মেলেনি।
নিখোঁজ যুবকের পরিবারের সদস্যরা জানান, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে জাকিরের মাধ্যমে তারা লিবিয়ায় যান। নিখোঁজ যুবকদের ১৫ দিনের মধ্যে ইতালিতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও লিবিয়ার গেম ঘর নামে একটি বন্দী শিবিরে কয়েক মাস ধরে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে গত বুধবার মধ্যরাতে একটি ছোট ডিঙ্গিতে করে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন তারা। ২৫ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ওই নৌকায় ৫৫ জন যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। এক ঘণ্টার মধ্যেই ভূমধ্যসাগরে লিবিয়া সীমান্তে নৌকাটি ডুবে যায়। এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারাসহ বেশ কয়েকজন সাগরে নিখোঁজ হন। বৃহস্পতিবার সকালে এ খবর শোনার পর দালাল জাকিরের পরিবার ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। নিখোঁজ যুবকের পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিলন মিয়ার শরণাপন্ন হন। পরে মিলন মিয়া লিবিয়ায় থাকা জাকিরের মোবাইল নম্বরে কয়েকবার ফোন করে ঘটনাটি জানতে পারেন।
নিখোঁজ মোখলেশ মিয়ার বড় বোন আরজিনা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, গত বুধবার রাতে জাকিরের চাচাতো ভাই শাহিনুরের সঙ্গে কথা হয়। এরপর তিনি বলেন, শুক্রবার তারা ইতালি যাবেন। কিন্তু শুক্রবার ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাই। জাকিরের বাবাকে ১৪ লাখ টাকা দিয়েছি।
রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ গ্রামের হান্নান মিয়া বলেন, আমার ছেলে হীরা মিয়া তাদের সঙ্গে লিবিয়ায় খেলার আসরে ছিল। রুক্ষ সাগরের কথা শুনে ছেলেকে বললাম ওই ডিঙিতে না উঠতে। ওই নৌকায় নারায়ণপুর এলাকার জুটুন সূত্রধর নামে এক ছেলেও ছিল। তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। জুটনের বাবা আমাকে ফোন করে ঘটনা জানালে আমি নিখোঁজ মোখলেছ ও কামালের বাড়িতে খবর দিতে আসি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মিলন মিয়া বলেন, যুবকের স্বজনরা আমার কাছে আসতে থাকে। লিবিয়ায় আমি জাকিরের মুঠোফোনে বহুবার ফোন করেছি। মিলন নামে জাকিরের এক সহযোগী ফোন ধরে তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানায়।
বেলাবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, আপনার মাধ্যমে খবর পেয়ে থানার ওসিকে জানিয়েছি। সরকারিভাবে কোনো অনুপস্থিত তথ্য পাওয়া যায়নি।