যেকোনো কাউন্টারে সব ধরনের টিকিট পাওয়া যাবে
সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং ব্যবহারকারী ফি আদায়ের নতুন নিয়মে আর্থিক স্বচ্ছতা আনতে এই উদ্যোগ।
বিভিন্ন সেবার বিপরীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ব্যবহারকারী ফি আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন নিয়মে ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে ব্যবহারকারী ফি আদায় করা হচ্ছে। আর ফি আদায়ের এই প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক, চমেক শাখা। এই প্রোগ্রামের অধীনে একজন সেবাপ্রত্যাশী এখন হাসপাতালের যেকোনো কাউন্টারে সব ধরনের ফি দিতে বা সব ধরনের টিকিট কিনতে পারবেন। এই সুযোগ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
জরুরী (এখন ওএসইসি) কাউন্টারগুলি শুধুমাত্র জরুরী পরিষেবা এবং ইনডোর ভর্তির জন্য টিকিট বুক করতে ব্যবহৃত হয়। আর পরীক্ষার সেবা নিতে হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে হতো। অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট কাউন্টারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সেবা ছাড়া অন্য কোনো সেবা ফি প্রদানের সুযোগ ছিল না। কিন্তু এখন, একজন সেবা প্রার্থী জরুরী কাউন্টার থেকে রেডিওলজি বিভাগের আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান সহ সমস্ত পরিষেবার জন্য ফি প্রদান করতে পারেন। একইভাবে প্যাথলজি বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য এখানে ফি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও আপনি আউটডোর টিকিট কিনতে পারেন। শুধু জরুরি কাউন্টারেই নয়, হাসপাতালে স্থাপিত যে কোনো কাউন্টারেই এ সুযোগ পাচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। নতুন এই নিয়মের ফলে সেবাপ্রত্যাশীদের ভোগান্তি কমানোর পাশাপাশি ইউজার ফি’র ক্ষেত্রে হাসপাতালের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কথা বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ার (ওএসইসি) এর মধ্যে রয়েছে টিকিট কাটা, আউটডোরে (বহিরাগত রোগী বিভাগে ডাক্তার দেখা), রোগীদের ঘরে ভর্তি করা, রেডিওলজি ও প্যাথলজি (এন-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি) সহ সব ধরনের পরীক্ষা। স্ক্যান, এমআরআই, সিবিসি)। , আরবিএস, প্রস্রাব, ডোপ টেস্ট, ইসিজি, ইকো, এন্ডোস্কোপি, ব্রঙ্কোস্কোপি, রেডিওথেরাপি ইত্যাদি) এবং অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া সহ সমস্ত ব্যবহারকারীর ফি এখন পর্যন্ত হাসপাতালের নিজস্ব কর্মীদের দ্বারা ম্যানুয়ালি সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই ফি ৬টি মনোনীত কাউন্টারে নেওয়া হয়েছিল। তবে নতুন নিয়মে ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে এসব ফি আদায় করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৭টি কাউন্টারে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বা ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ার (ওএসইসি), মূল ভবনের নিচতলায় ব্লাড ব্যাংকের সামনে, আনুষঙ্গিক ভবনের (দুই তলায়) সামনে ও ভেতরে। আনুষঙ্গিক ভবনের নিচতলায় চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগে, আনুষঙ্গিক ভবনের ৪র্থ তলায় প্যাথলজি বিভাগে এবং মূল ভবনের ৩য় তলায় রেডিওলজি বিভাগের সামনে কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি কাউন্টারে ৩ থেকে ৫টি কম্পিউটার বসানো হয়েছে। ৭টি কাউন্টারে ২৫-৩০টি কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যবহারকারী ফি আদায়ের প্রক্রিয়া চলছে। তবে পরে কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জানান, রোগী ও সেবা গ্রহীতাদের সুবিধার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শামীম আহসান বলেন, নতুন নিয়মে রোগীরা উপকৃত হচ্ছেন। একজন রোগী এখন যেকোনো কাউন্টার থেকে যেকোনো টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, এখন পর্যন্ত, জরুরি বিভাগে শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা এবং ইনডোর ভর্তির টিকিট পাওয়া যেত। তবে নতুন ব্যবস্থায় একজন রোগী জরুরি অবস্থা থেকেও আউটডোর টিকিট পেতে পারেন।
নতুন নিয়মে দৈনিক আয় এখন ব্যাংকে জমা হচ্ছে মন্তব্য করে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, আগে সেবার আয়ের টাকা প্রতিদিন ব্যাংকে জমা হওয়ার কথা থাকলেও তা অনেকাংশে মানা হয়নি। কিন্তু এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে হিসাব রাখা হচ্ছে এবং প্রতিদিনের আয় একই দিনে ব্যাংকে জমা হচ্ছে। আমরা মনে করি এটি আর্থিক হিসাবের ক্ষেত্রেও একটি বড় সুবিধা। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, হাসপাতালের আর্থিক জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পথ সুগম হয়েছে। শামীম আহসান।
প্রসঙ্গত, চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত বছরের ১২ মার্চ (২০২২) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে হাসপাতালের সকল ব্যবহারকারীর ফি ব্যাংকের মাধ্যমে আদায়ের অনুমোদন চেয়েছিল। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের স্বাক্ষরে চিঠিটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে। ওই বছরের ৪ এপ্রিল চমেক হাসপাতালের প্রস্তাবের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়। গত ২৫ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে মতামত জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে ফেরত চিঠি দেয়।