এবার বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব
এবার বিদ্যুতের পাইকারি দাম ইউনিটপ্রতি ৫০ পয়সা (৮ দশমিক ০৩ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। পাইকারি বাড়লে ভোক্তা পর্যায়েও দাম ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থনীতিবিদ ও খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষ ও উদ্যোক্তাদের জন্য ভালো নয়। এতে সবার খরচ বাড়বে, উৎপাদন কমবে। যা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।
গত ২১ নভেম্বর এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছে। তখন প্রতি ইউনিটের গড় পাইকারি দাম ছিল ৬ টাকা ২০ পয়সা। পিডিবির প্রস্তাব অনুযায়ী, দাম বাড়লে ইউনিটপ্রতি দাম হবে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।
১২ জানুয়ারি, একটি নির্বাহী আদেশে খুচরা মূল্য ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। এরপর গত ১৮ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম তামিম বলেন, বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোয় ভোক্তা ও উদ্যোক্তাদের খরচ বাড়লেও তা সহনীয়। তবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ছিল ভয়াবহ। শিল্প খাত এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর মধ্যে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়লে আরও এক দফা দাম বাড়বে।
বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, ডলারের অবমূল্যায়ন এবং ফার্নেস অয়েলের ওপর শুল্ক ছাড় প্রত্যাহার করায় পিডিবির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহের খরচ ছিল ৯ ৪৪ পয়সা। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৫৪ পয়সা। গত নভেম্বরে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে মূল্যবৃদ্ধির পর পাইকারি বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য এখন ৬ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট পিডিবির লোকসান ৫ টাকা ৩৪ পয়সা। এতে গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বাড়লে পিডিবির বার্ষিক ব্যয় বাড়বে ১০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। ফলে এ খাতে সরকারি ভর্তুকিও বাড়বে। ভর্তুকি কমাতে প্রতি ইউনিট পাইকারি দাম ৫০ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে পিডিবি।
বিদুৎ বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী, পিডিবির চারটি বিতরণ অঞ্চল – পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং উত্তরাঞ্চল। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে (নেসকো) বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে।
পিডিবি বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রতি ইউনিট পাইকারি মূল্য ২৩০ কেভি (কিলোভোল্ট) লাইনে ৭.৬০৪০ টাকা থেকে ৮.১০৪০ টাকা এবং ১৩২ কেভি লাইনে ৭.৬৩৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.১৩৩৫ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। ৩৩ কেভি লাইনে পিডিবি ডিস্ট্রিবিউশন জোনের দাম ৬.৭৮৯৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭.২৮৯৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়েও দাম বাড়বে: সূত্র জানায়, পাইকারি মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুতের খুচরা মূল্যও ৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। তবে এর জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কোনো প্রস্তাব দিতে হবে না। সর্বশেষ ৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয় বেড়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।