বাঁকখালী নদী দখল করে প্লট, রিজওয়ানরা ক্ষুব্ধ
একপাশে বাঁকখালী নদী; ওপারে প্যারাবন। প্রায় ৬০০ হেক্টর বনভূমির একটি প্লট, তার উপর ছোট ঘর তৈরি করা হচ্ছে। সবুজে লাল ইটের দেয়ালে যে কারো চোখ আটকে যাবে। অনেক প্লটের সামনে টানা মালিকানার সাইনবোর্ড।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ২০০ গজের মধ্যে বাঁকখালী নদী দখল করে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে। অস্তিত্ব সংকটে কক্সবাজারের গুরুত্বপূর্ণ এই নদীটি। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে একদল পরিবেশবাদী গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে যান দখলের ভয়াবহতা দেখতে। পরিদর্শন শেষে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
এ সময় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের প্রচলিত আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে যেভাবে বাঁকখালী নদী দখল করা হচ্ছে তাতে কক্সবাজারে প্রশাসন আছে বলে কিছু মনে হয় না।
নদী ও প্যারাবনের জমি দখলদারদের কেউ কেউ নিজেদের বলে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি প্লটের দাম রাখা হয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। সরকারি জমি বিক্রি হলেও প্রশাসন নীরব। তবে বাঁকখালী নদী ও প্যারাবন দখলে জড়িত ১৫৭ জনকে শনাক্ত করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। পরিবেশ অধিদপ্তর তিনটি মামলা করে।
এসব মামলায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এসএম আতিকুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান, এসএম কফিল উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান, যুবদল নেতা আমির আলীসহ অর্ধশতাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান জেলা প্রশাসনের গঠিত নদী সংরক্ষণ কমিটির সদস্য। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তার নির্দেশে প্রতিদিন পৌরসভার বর্জ্য বাঁকখালী নদীতে ফেলা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে মেয়র মজিবুর রহমান বলেন, ‘নদীর দখলে তার নামে আছে, বিষয়টি জানা নেই। পৌরসভার কোনো বর্জ্য এখন নদীতে ফেলা হয় না। বাইরের কেউ ছুড়ে মারছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, বাঁকখালী নদী দখলের বিরুদ্ধে প্রশাসন সবসময় সোচ্চার। মঙ্গলবারও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, বাঁকখালী নদী দখল ও প্যারাফরেস্ট ধ্বংসের তিনটি মামলার মধ্যে একটিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন, তাই মামলা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার সুযোগ নেই।