সেদিন মন্দিরে হামলা ভাঙচুরেও ইকবাল

0

কুমিল্লার পূজা মণ্ডপে ইকবাল হোসেন রাতে পবিত্র কোরআন রাখেন। দিনের বেলা যখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, তিনিও মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরে অংশ নেন। ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিলে ইকবাল ছিলেন সামনের সারিতে। সেই মিছিল থেকে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় মন্দিরে হামলার ঘটনায়ও তার ভূমিকা ছিল। পুলিশের মাধ্যমে প্রাপ্ত আরেকটি নতুন ভিডিওতে ইকবালকে মন্দিরে হামলাকারীর ভূমিকায় দেখা যায়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মন্দিরে কোরান রাখার পরপরই ইকবাল পালিয়ে যাননি। গভীর রাতে মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার পর সকালে হামলার সময়ও তিনি উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতিতে ভয় পেয়ে তিনি প্রথমে ট্রেনে চট্টগ্রাম যান সেখান থেকে একটি বাসে কক্সবাজার যান। বৃহস্পতিবার সেখানে বেড়াতে আসা তিন যুবক ইকবালকে সৈকতে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখেন। তার মুখটা তিন বন্ধুর কাছে পরিচিত লাগছিল। পরে তাদের ধারণা, ওই যুবকের চেহারা কুমিল্লা মন্দিরের ঘটনায় অভিযুক্তের সঙ্গে মিল রয়েছে। ইকবালকে তাদের অনুসন্ধানী মন এবং সচেতনতার জন্য গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর ইকবালকে কড়া নিরাপত্তায় কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। শনিবার পুলিশ সদর দফতরের পক্ষে ইকবাল, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ), কুমিল্লা জেলা পুলিশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এবং আরও কয়েকটি ইউনিট। আইন প্রয়োগকারী. জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এটি এক ধরনের ‘সমষ্টিগত জিজ্ঞাসাবাদ’।

জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেন, নানুওয়ারের দীঘিরপাড়ের দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজায় কোরান শরীফ রাখার পর ইকবাল হনুমানের মূর্তি থেকে হাতুড়ি সরানোর কথা স্বীকার করেছেন। তবে কে কাজটি পরিচালনা করেছেন তা তিনি বলেননি। এ প্রসঙ্গে ইকবাল দাবি করেন, তিনি নিজেই মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেখানে মূর্তি দেখে তার ভালো লাগেনি। তিনি ভেবেছিলেন মন্দিরে কোরআন রাখলে কোনো পূজা হবে না। পুজো ব্যাহত করার জন্য তিনি এই কাজ করেছেন।

তবে তদন্তকারীরা ইকবালের ‘সরল স্বীকারোক্তি’কে বিশ্বাসযোগ্য মনে করছেন না। তারা বলে কেউ ইকবালকে ব্যবহার করেছে। সে হয়তো সেই নামটি লুকিয়ে রেখেছে।

তদন্তে জড়িত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কুমিল্লার ঘটনার একদিন পর, পুলিশ ১৪ অক্টোবর সকাল ১০ টার দিকে একটি সিসিটিভি ফুটেজ পায়। প্রথমে তদন্তকারীরা ভেবেছিলেন এটি একটি লাঠি। পরে তারা মন্দির ভাংচুরের আগে ও পরে একাধিক ছবি মিলেছে গদা নিশ্চিত হওয়ার পর। এক পর্যায়ে তারা নিশ্চিত হন যে মন্দিরে প্রবেশের পর থেকে যুবকের হাতুড়ি ছিল না। এরপর তিনি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে এলাকার অনেকের কাছ থেকে তথ্য নেন। ১৪ অক্টোবর বিকেলে, পুলিশ নিশ্চিত করে যে সিসিটিভি ফুটেজে যুব নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের সুজানগর সংলগ্ন দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুরপাড় এলাকার একজন বাসিন্দাকে দেখানো হয়েছে। তার বাবা নুর আহমেদ আলম পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী।

এছাড়া ইকবালকে কুমিল্লায় মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরে অংশ নিতে অনেকেই দেখেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আরেকটি ফুটেজ পুলিশের হাতে আসার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা নিশ্চিত করেছে।

তদন্তের সঙ্গে জড়িত আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইকবাল এখনো কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট করেননি। মন্দিরে কোরআন শরিফ রাখার জন্য নির্জন রাত কেন বেছে নেওয়া হয়েছে, কেউ টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া হিসেবে ব্যবহার করেছে কি না, দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন না- এমন কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।

ঘটনার বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ইকবালকে কুমিল্লার কেউ ব্যবহার করেছে। কেউ ইকবালের মতো যুবককে বেছে নেয় বড় অশুভ পরিকল্পনা নিয়ে। সেই স্থানীয় চক্রের পেছনে হয়তো অন্য কেউ আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *