মহাসড়ক দখলের লড়াই সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে

0

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েই রাজপথ দখলের হুমকি দিচ্ছে। দুই দলের নেতারা রাজপথে ‘যুদ্ধ ও ফয়সালার’ নিয়ে কথা বলছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলার ও জ্বালানি সংকট এবং বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার কারণে অর্থনীতি বিপর্যস্ত। জীবনযাত্রার চাপে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এমন সংকটময় সময়ে রাজনৈতিক সংঘাত পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। তাই সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার জন্য অভিজাত মহল থেকে রাজনৈতিক উদারতা ও ঐকমত্যের তাগিদ রয়েছে।

বিভাগীয় শহরে গণসংযোগ করছে বিএনপি। ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ বাধামুক্ত হলেও ময়মনসিংহ ও খুলনায় পরবর্তী কর্মসূচিতে বিপত্তি দেখা দেয়। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। শ্রমজীবী ​​মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাহত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বিএনপিকে সড়কের ইজারা দেওয়া হয়নি, আওয়ামী লীগও রাজপথে নামবে। বাকি সাতটি বিভাগীয় সমাবেশ ও বিএনপির অন্যান্য কর্মসূচি যে ‘সহজ’ হবে না তা অনেকটা স্পষ্ট আওয়ামী লীগের বক্তব্য।

রাজনৈতিক উত্তেজনা সংঘর্ষে রূপ নিলে অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটের কারণে বিনিয়োগ কম হবে। বিনিয়োগের চেয়ে খরচ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বেশি অবদান রাখবে। এটি রক্ষা করার জন্য স্থিতিশীলতা এবং নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে স্থিতিশীলতা ও সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক ডামাডোল শুধু বাজার ব্যবস্থাকেই অস্থিতিশীল করবে না, আমন সংগ্রহ প্রক্রিয়া এবং এক কোটি পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমকেও ব্যাহত করবে। দরিদ্র এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা, যারা জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পরিবহন, দোকানপাট, কলকারখানা বন্ধ থাকলে অধিকাংশ মানুষই বিপাকে পড়বে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, খুচরা ব্যবসায়ী, চাকরিপ্রার্থী- সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

পরিস্থিতি যে আরও খারাপ হচ্ছে, তা প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বক্তব্যে স্পষ্ট। গতকাল রোববার তিনি বলেন, ‘রিজার্ভের যে অবস্থা, এরপর কী হবে জানি না! আমরা এখন এলএনজি আনছি না। আমি জানি না আমরা এই সময়ে ২৫ ডলার হিসাব করেও এলএনজি আমদানি করতে যাচ্ছি কিনা। সাশ্রয়ী হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। প্রয়োজনে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।’

বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের মতে, মূল্যস্ফীতি ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ঢাকা শহরে আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। কারখানার উৎপাদন কমে গেছে। রপ্তানি কমেছে। রেমিটেন্স কমছে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বিভ্রান্ত মানুষ। ঋণের জন্য আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছে যেতে হয়েছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যাহত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অর্থনীতি রক্ষায় সব পক্ষের ঐকমত্যের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, যারা দেশ চালাচ্ছেন তাদের থেকে এই উদ্যোগ আসা উচিত। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা।

তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে ঐক্যমত্যের কোনো লক্ষণ নেই। সরকার পতনের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সাধারণ সভা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিরোধী দল বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করতে পারবে এমন আশা নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ডিসেম্বরে খেলা হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘রাজনৈতিক সংঘাতে কেউ নিহত হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে’ এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পরদিন তিনি বলেন, ‘এখন যদি তারা (বিএনপি) উসকানি দিতে চায় এবং ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়। সংস্থা, সরকার দায় নেবে না।”

বিএনপির কর্মসূচিতে বিশাল জনসমাবেশের পাল্টা হিসেবে বড় শোডাউনও দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। আগামী ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন, ১১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুবলীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুব সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। এ ছাড়া বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই মাঠ দখলের হুমকি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলছেন, আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিএনপি পাল্টা দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। জেলা-উপজেলা ও বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মেলনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। ডিসেম্বরে জাতীয় কাউন্সিল। এরপর শুরু হবে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *