ডলারের বাজারে কিছুটা স্বস্তি

0

জুলাইয়ের পর আগস্টেও প্রবাসী আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি রয়েছে। চলতি মাসের ১৬তম দিনে ১১৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। কমছে এলসি খোলার হার। সব মিলিয়ে ডলারের দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল বুধবার ব্যাংকগুলো আমদানির জন্য ১০৮ টাকা পর্যন্ত দরপত্র নেয়। খোলা বাজারে দাম কমেছে ১১০ টাকা। রপ্তানিকারক ও প্রেরকদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ১০৪ থেকে ১০৫ টাকা দরে। সম্প্রতি আমদানি করা ডলারের সর্বোচ্চ দাম বেড়েছে ১১২ টাকা। আর খোলা বাজারে ১১৯ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে বাজারে আরও স্থিতিশীলতা আনতে ব্যাংকের পর গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক মানি চেঞ্জারদের ডলার প্রতি সর্বোচ্চ মুনাফার সীমা দেড় টাকা নির্ধারণ করেছে। এর আগে গত রোববার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাফেদা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় ডলার বিক্রির মধ্যে সর্বোচ্চ এক টাকার পার্থক্য থাকবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে ব্যাংকগুলোর নিজেরাই সব ব্যাংককে চিঠি দেওয়ার কথা। আর ব্যাংকের রেট কার্যকর হচ্ছে কি না তা নজরদারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে গত রোববার বৈঠকের পর চার কার্যদিবসের মধ্যে দুই দিন সরকারি ছুটি। বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমানের জায়গায় নতুন এমডি নিয়োগ করা হয়েছে। এসব কারণে আগামী সপ্তাহে বাফেডার পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। এর আগে গত মে মাসে এক বৈঠকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক টাকা পার্থক্য রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, এক টাকা মার্জিন রেখে যে হারে ডলার কেনা হবে, সে হারে ডলার বিক্রির সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হতে পারে। বেশি ছুটির কারণে চলতি সপ্তাহে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। তিনি বলেন, সবার প্রচেষ্টায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। এটা সবার জন্য ভালো খবর।

গতকাল মানিচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠক হয়েছে। ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের সভাপতিত্বে সভায় বিভিন্ন মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়, মানি চেঞ্জাররা ব্যাংকের চেয়ে বেশি হারে ডলার কিনতে পারবে। যে দরে ডলার কেনা হবে, সর্বোচ্চ দেড় টাকা বেশি দরে বিক্রি হবে। তবে ব্যাংকের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে কেনার বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। কারণ একেক ব্যাংক একেক রেটে ডলার বিক্রি করে।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এবিবি ও বাফেডার সঙ্গে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়েছে যে রেমিটেন্স ও রপ্তানি বিল ব্যাংকগুলো যে দামে ক্রয় করবে তার চেয়ে সর্বোচ্চ এক টাকা বেশি হারে বিক্রি করবে। মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে ব্যাংকের গড় হারের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে ডলার কেনার কথা বলা হয়েছে। বিক্রির ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৫ কোটি ডলারে। রপ্তানি আয় ছিল ৪ হাজার ৯২৫ মিলিয়ন ডলার। এর ফলে ৩.৩২৫ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। গত অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছে ১৫ শতাংশ। চলতি অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সে ১.৮৭০ মিলিয়নের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি ব্যাপক বৃদ্ধির পেছনে মানি লন্ডারিং জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এখন বড় বড় এলসি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত মনিটরিং করে। এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। আন্তর্জাতিক হারের সঙ্গে এলসির হার সমন্বয়সহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করে অনাপত্তি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব সিদ্ধান্তের ফলে এলসি খোলা কমছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *