ব্যাংকিং খাতে সংকট আরও বাড়তে পারে।ঋণ পুনর্নির্ধারণের জন্য নতুন নীতি

0

খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার নতুন নীতির আওতায় আগের সব সুবিধাকে ছাপিয়ে খেলাপিরা টাকা ফেরত দিতে আরও শিথিল হবেন। টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও অনেকেই স্বেচ্ছায় ফেরত দেবেন না। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারাবে। তবে কাগজে কলমে খেলাপি ঋণ সাময়িকভাবে কম হতে পারে। এভাবে খেলাপি ঋণ দমনের ফলে ব্যাংকিং খাতে সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা।

স্টেকহোল্ডাররা বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নীতিমালা প্রয়োগের চেয়ে বারবার কীভাবে কম দেখা যায়, তা খুঁজে বের করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন নীতি আগের সব রেকর্ড ভেঙে খেলাপিদের ব্যাপক ত্রাণ দিয়েছে। ৫০০ কোটি টাকার বেশি মেয়াদী ঋণ খেলাপি হলে, ২৯ বছরের জন্য চারবার পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ডাউনপেমেন্ট অর্থাৎ নগদ জমার হার কয়েক শতাংশ কমানো হয়েছে। আবার আমানতের মাত্র তিন শতাংশ নতুন ঋণ নেওয়ার অনুমতি রয়েছে; আগে যেখানে ১৫ শতাংশ জমা দিতে হতো। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে নানা সমালোচনা রয়েছে। অধিকাংশ ব্যাংকই ঋণ আদায় নিয়ে চিন্তিত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণের ওপর জোর না দিয়ে আড়াল করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে করে খেলাপিরা আরও উৎসাহিত হয়। ব্যাংকগুলো এমনিতেই সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু আমানতের প্রবাহ ঠিক থাকায় সংকটটা এখন সেভাবে বোঝা যাচ্ছে না। কোনো কারণে আমানত না পেলে বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে। ঋণখেলাপিদের বারবার এভাবে ছেড়ে দেওয়া খুবই দুঃখজনক।

একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, একটি শ্রেণিও ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয় না। আবার একটি শ্রেণী আছে, যারা ঋণ পরিশোধ না করার জন্য নানা উপায় খোঁজে। ব্যাংকগুলো চাপের মুখে টাকা সংগ্রহ করে। নতুন নির্দেশনার ফলে ঋণ খেলাপির সুযোগ বেড়েছে। যারা নিয়মিত ফেরত দেন অনেকেই ব্যাংকে টাকা দিতে চান না। তারা পুনর্গঠন করবে, পুনর্নির্ধারণ সুবিধা নেবে, গ্রেস পিরিয়ড নেবে এবং নতুন ঋণ নেবে। এইভাবে, আপনি মোটা অঙ্কের টাকা আটকে রেখে ব্যাংকগুলিকে বিপদে ফেলবেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন শিথিলতা কখনই কাম্য নয়। ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়তে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১২ সালে ঋণ পুনঃতফসিল নীতি জারির পর খেলাপিদের সুবিধার বিষয়টি সামনে আসে। সেই নীতিমালার আলোকে, খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ তিনবার ১২ মাস, ২৪ মাস এবং ৩৬ মাসের জন্য পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমবার ঋণের স্থিতির ১০ শতাংশ, দ্বিতীয়বার ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়বার ৩০ শতাংশ জমা রাখার বিধান ছিল। এরপর কেউ নতুন করে ঋণ নিতে চাইলে ১৫ শতাংশ আপসের টাকা জমা দেওয়ার বিধান ছিল। নতুন নীতিমালায় আরও ছাড় দেওয়া হয়েছে।

আর্থিক খাত বিশ্লেষক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনুদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় শুধু খেলাপিরাই উৎসাহিত হবে না, খেলাপি ঋণের সংখ্যাও কমবে। ফলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের তথ্য আরও আড়াল হয়ে যাবে। এ ছাড়া ব্যাংকের টাকা আটকে রাখা হবে। তখন ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতির ওপর চাপ তৈরি হবে। নতুন ঋণ করার ক্ষমতা কমে যাবে।

তবে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম এই নীতিকে সময়োপযোগী ও শক্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা প্রণয়ন, পরামর্শ ও তদারকি করবে। ব্যাংক পুনরায় নিবন্ধন করবে। তিনি বলেন, কেউ খেলাপি হলে তাকে জামিন দিতে হবে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষ চাকরি হারাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা: অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে খেলাপিদের বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এবং সহকারী মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *