বন্যা।আরিফা-রিমারা স্কুলে যেতে বই শুকাচ্ছে

0

কয়েকদিন রোদ-বৃষ্টি খেলার পর সিলেটের পরিষ্কার আকাশে উজ্জ্বল সূর্যের দেখা মিলেছে। বৃষ্টির দিনে, সূর্য বন্যা কবলিত এলাকায় স্বস্তি নিয়ে আসে। ১০-১২ দিন পর বাড়ি থেকে পানি নামলেও মাটির স্তর ছিল। নগরীর তেরতন এলাকার হাজেরা বেগম জানান, শনিবারের প্রখর রোদের কারণে বাড়িটি কিছুটা বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠেছে। রোদে ভেজা আসবাবপত্র ও বিছানাপত্র রক্ষার চেষ্টা করছেন বন্যার্তরা। বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও ‘সুজি মা’ দেখে কাজে ছুটে এসেছে, বন্যায় হারিয়ে যাওয়া বই শুকাতে ব্যস্ত তারা।

সদর উপজেলার ছামাউরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরিফা, আনিকা, রিমা, আফরোজা, হোসেন, আতিকসহ অনেকে লেখাপড়া করছে। কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ছামাউরাকান্দি গ্রামের এসব শিশুদের ঘরবাড়িও ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে। তাদের কেউ কেউ বড়দের সঙ্গে আশ্রয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচায়। পানি কমার পর তারা বাড়ি ফিরে দেখেন তাদের আসবাবপত্র ও বইপত্র ভিজে গেছে। ছামাউরাকান্দি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আরিফা জানায়, তাদের বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। সব কিছুর পাশাপাশি তার ও ছোট বোন আফরোজার বইগুলো ভিজে যায়। রোদে শুকানোর চেষ্টা করছে।

ছামাউরাকান্দি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রইছ আলীর দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী রিমা রোদে বইগুলো রোদে শুকাতে দেন। সে বলে, আমি আবার স্কুলে যাবো। তাই আমার  বই দরকার। ভেজা বইয়ের অনেক পাতা হারিয়ে গেছে। শিশুটি নোটবুক শুকিয়ে লেখার উপযোগী করার চেষ্টা করছে। আরিফা-আফরোজের বাবা প্রবাসী মফিজ আলী। রিমার বাবা রইছ আলী জানান, বন্যায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এগুলো মেরামত করা দরকার। ধান-চালও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্যও বই দরকার, সেটাও ভাবতে হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশেদ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তালিকা করা হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ণয় করা যায়নি।

সিলেট-সুরমা-কুশিয়ারাসহ সব নদীর পানি কমলেও চারটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ে এখনো পানি রয়েছে। আবার উপজেলা পর্যায়ে অনেক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। শাখাওয়াত এরশেদ বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যতটা সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এক মাসের মধ্যে নগরীর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কটি সুরমা নদীর তীরে তলিয়ে যায়। গোয়াইনঘাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজে পানি জমে আছে। বন্যা কবলিত এলাকার যেসব স্কুলে পানি নেই সেখানেও আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। ফলে চলমান বন্যায় শিক্ষা খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মহামারী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় বিপর্যয় আবারও শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে দিয়েছে।

সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৩৬১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২৪টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৯টি স্কুল বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। একইভাবে ৬টি কলেজের মধ্যে ৩৬টি কলেজ প্লাবিত এবং ১৭টি কলেজকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫৯টি মাদ্রাসার মধ্যে ১৪৯টি প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ ৫৩টি মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার আবু সাইদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এখনো নিরূপণ করা যায়নি।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও কুশিয়ারের পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে কমছে। একদিনে কানাইঘাটে সুরমার পানি ১৮ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে এই পয়েন্টে এখনও পানি ৪১ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমলসিদে কুশিয়ারের পানির স্তর সর্বোচ্চ ২৩ সেন্টিমিটার কমেছে। তার পরও পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *