ভোজ্যতেলের বাজারে আরও অস্থিরতার আশঙ্কা
ভোজ্যতেলের বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানোর ফলে কিছু সময়ের জন্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল। পাম ও সয়াবিন তেলের সরবরাহ কয়েক সপ্তাহ ধরে সংকটে রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া গত শুক্রবার পাম তেল রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় ভোজ্য তেলের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূর্যমুখী তেলের দুই প্রধান রপ্তানিকারক রাশিয়া ও ইউক্রেন তেল সরবরাহ নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে পাম তেলের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। ঠিক তখনই, পাম তেলের শীর্ষ উৎপাদক দেশ ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের ওপর চাপ বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ২৭ এপ্রিল কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু তার আগেই মার্কিন ফিউচার মার্কেটে সয়াবিন তেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। অনেক খুচরা বিক্রেতা বলছেন, পাইকারি বিক্রেতা ও কোম্পানিগুলো এখন প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। কয়েকদিন ধরে এই সমস্যা বেড়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর যে ১৩ থেকে ১৪ মিলিয়ন টন পাম অয়েল আমদানি হয় তার ৮০ শতাংশই আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাকিরা আসে মালয়েশিয়া থেকে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেশটির ভোজ্যতেলের বাজারে সরবরাহ সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
রোববার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাম তেল পাওয়া গেলেও বিক্রেতারা কেজিতে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নিচ্ছেন। বোতলজাত সয়াবিন তেলের এক লিটার ও আধা লিটারের বোতলের মিল খুবই কম। পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও অন্য পণ্য না কিনলে তেল বিক্রি করতে চান না বিক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারের রতন স্টোরের স্বত্বাধিকারী ফজলুল করিম বলেন, তির ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের বোতল গতকাল পাইকারি পর্যায়ে ৭৬০ টাকায় কিনতে হয়েছে। শ্রম খরচের সঙ্গে দুই টাকা ৫০ পয়সা যোগ করলে প্রতি বোতলের দাম দাঁড়ায় ৭৬২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু বোতলে লেখা আছে ৭৬০ টাকা। বোতলে লেখা দামের চেয়ে বেশি দামে কোনো ক্রেতার তেল কেনা উচিত নয়।
কেমন বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য পণ্য বিক্রি করতে হলে দোকানে তেল রাখতে হবে। সেই কথা মাথায় রেখে, তিনি আরও পণ্য কেনেন এবং পরিচিতদের কাছে কয়েক বোতল বিক্রি করেন। তার লোকসান সমন্বয় করা হয়েছে বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি তেল বিক্রেতা সোনালী ট্রেডার্সের মালিক আবুল কাশেম জানান, গতকাল শুধু রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের বাংলাদেশ ভোজ্য তেল ২০ কার্টন তেল দিয়েছে। প্রতিটি কার্টনে চারটি পাঁচ লিটারের বোতল থাকে। সে হিসেবে কোম্পানিটি মাত্র ২০০ লিটার তেল দিয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলো ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে তেমন তেল সরবরাহ করছে না।
পাম তেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারে পাম তেল নেই বললেই চলে। তেল শোধনাগারগুলি প্রতিদিন তেলের বিক্রয় মূল্য ঘোষণা করে। তবে গতকাল তারা কোনো দাম ঘোষণা করেনি। ফলে তেল কেনা সম্ভব হয়নি।
তবে রপ্তানি বন্ধের কারণে ইন্দোনেশিয়ার বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন না আমদানিকারকরা। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি টন দুই হাজার তিনশ’ ডলার এবং পাম তেলের দাম এক হাজার ৬৫০ ডলারে উঠেছে। তারপরও তেল আমদানি করা হচ্ছে। দেশের বাজারেও পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে কোম্পানিগুলো। বাজার সংকটে পড়ার কথা নয়।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ইন্দোনেশিয়া পাম তেলের বড় উৎস। দেশটি রপ্তানি বন্ধ করে দিলে অন্যান্য বাজারের ওপর চাপ পড়বে। বিকল্প বাজারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সয়াবিন, সূর্যমুখী ও ক্যানোলার মতো পরিশোধিত তেল আমদানিতে উৎসাহ দিতে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হবে।