ট্রেনে ঈদযাত্রা: ভাগ্যবান হলে অনলাইনে টিকিট পেতে পারেন, না হলে মেলে না
অনলাইন ট্রেনের টিকিট অনেকটা লটারির মতো। ভাগ্য ভালো থাকলেই পাওয়া যায়। সকাল ৮টায় অনলাইনে লাইভ হওয়ার প্রথম সেকেন্ডে মাত্র দেড় লাখ মানুষ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেন, শুধুমাত্র তারাই টিকিট পান। রোববারের প্রথম সেকেন্ডে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। সেই নির্দিষ্ট মুহুর্তে যাদের ইন্টারনেটের গতি ভাল ছিল, তারা এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের চেয়ে এগিয়ে থাকার কারণে ওয়েবসাইটটি অ্যাক্সেস করতে পারে। বাকিরা পড়েন সারির ব্যবস্থাপনায়।
ট্রেনের টিকিট বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান সহজ লিমিটেডের মুখপাত্র ফারহাত আহমেদ বলেন। তিনি জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের মাত্র ১২ হাজার ১৫৬টি আসনের টিকিট অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। তবে টিকিট পেতে চেষ্টা করছেন ২০ লাখের বেশি মানুষ। চাহিদার তুলনায় আসন সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় এক শতাংশেরও কম মানুষ টিকিট পাচ্ছেন। বাকিরা খালি হাতে ফিরছেন। টিকিট পাওয়া অনেকটা লটারির মতো হয়ে গেছে।
গত ২৬ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের টিকিট বিক্রি হয়েছে গতকাল। আগের দিনের মতো গতকালও উপচে পড়েছে স্টেশনগুলো। গত শনিবার দুপুরে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি অনেকে। ঈদে বাড়ি ফেরার টিকিট পেতে কাঁথা-বালিশ নিয়ে সারারাত কমলাপুরে অপেক্ষা করছিলেন অনেকে। তাদের অনেকেই টিকিট ছাড়াই খালি হাতে ফিরেছেন।
গত শনিবার বিকেল ৪টায় কমলাপুরের পাঁচ নম্বর কাউন্টারের সামনে রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিট লাইনে অপেক্ষা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দয়ান সাফি। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার ১৮ ঘণ্টা আগে তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তার ক্রমিক নম্বর ছিল ১২৮। রোববার বিকেলে দায়ান টেলিফোনে বলেন, তিনি এসির টিকিট পাননি। লাইনের শুরুতে ২০-২৫ জন দেওয়ার পর কাউন্টার থেকে বলা হলো এসির টিকিট শেষ। তাই বাধ্য হয়েই একটা সুন্দর চেয়ারের টিকিট নিতে হলো। কাউন্টারে পৌঁছাতে ৬ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে।
কমলাপুর থেকে রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ট্রেনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। যাত্রীরা বলছেন, উত্তরবঙ্গের রাস্তার অবস্থা বেহাল এবং বাসে উঠতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আর দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা বলছেন, পদ্মা পারাপার ফেরিগুলোতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই ট্রেনে যেতে চাই। গতকাল দেখা গেছে, শনিবার রাতে যারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারাই টিকিট পাচ্ছেন। আবার গতকাল যারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তারা্ টিকিট পাচ্ছেন না।
আগের দিনের মতো গতকালও যাত্রীদের অভিযোগ, কালোবাজারি করার জন্য রেলকর্মীরা টিকিট সরিয়ে নিচ্ছেন। ভিআইপিদের জন্য সমস্ত এসি টিকিট ‘বুক’ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তা পাচ্ছে না। যদিও রেলওয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার জানান, কমলাপুর, বনানী, তেজগাঁও, বিমানবন্দর ও ফুলবাড়িয়ার কাউন্টারে ১৫ হাজার ৭৯৮টি আসন রয়েছে। কিন্তু লাখ লাখ মানুষ টিকিট কিনতে আসছেন। সীমিত আসনের কারণে ৯৫ শতাংশ মানুষ টিকিট পাচ্ছেন না। একজন যাত্রী একবারে চারটি টিকিট কিনলে আগে আসা চার হাজার মানুষই টিকিট পাচ্ছেন।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) সরদার শাহাদাত আলী বলেন, টিকিট আটকানোর কোনো সুযোগ নেই। রেলওয়ে শ্রমিকদের জন্য দুই শতাংশ ছাড়া কোনো কোটা নেই।
অনলাইনে টিকিট না পাওয়া জহিরুল ইসলাম বলেন, সকাল ৭টা ৫৯ মিনিটে তিনি ওয়েবসাইটে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেনি। ওয়েবসাইটটি ৮:২৮ পর্যন্ত কাজ করছিল। তারপরও ঢুকতে পারলে অপেক্ষা করার মেসেজ আসে। আপনি অপেক্ষা থেকে টিকিট নির্বাচন বিকল্পে পরে যেতে পারেন। কিন্তু ততক্ষণে সব টিকিট শেষ।
একজন সাধারণ মুখপাত্র দাবি করেছেন যে তাদের সার্ভার এক সেকেন্ডের জন্যও ডাউন ছিল না। তিনি বলেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে সকাল আটটায় চোখের পলকে লাখ লাখ মানুষ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন। সাইটটি ডাউন নয়, তাই নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যবহারকারীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, যা একটি নতুন প্রযুক্তি। এ কারণে এবারের ঈদে এখন পর্যন্ত সার্ভার ডাউন হয়নি।