ট্রেনে ঈদযাত্রা।শেষ এসি কোচের টিকিট বিক্রি শুরু না হতেই

0

ঈদ-উল-ফিতর ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বগির টিকিট শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিক্রি শুরু হওয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। সারারাত লাইনে দাঁড়িয়েও  টিকিট না পাওয়া যাত্রীরা কারসাজি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। এসি টিকেট ‘ভিআইপি’দের জন্য সংরক্ষিত।

তবে রেল ও টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা অপারেটর সহজ লিমিটেড বলছে, কারচুপির সুযোগ নেই। যাত্রীদের তুলনায় এসি টিকিট নগণ্য, এক শতাংশেরও কম। যে কারণে এসি কেবিন ও সফট ক্লাসের টিকিট বিক্রি শুরু হলেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে রাতারাতি লাইনও পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। টিকিট বিক্রির কারণেও বিলম্ব হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদেরও।

কমলাপুরের পাঁচ নম্বর কাউন্টার থেকে ‘রংপুর’, ‘লালমনি’ ও ‘কুড়িগ্রাম’ এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে। বিক্রি শুরুর ৯ ঘণ্টা আগে শুক্রবার রাত ১১টায় কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়ানো দিদারুল ভূঁইয়া এসি টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন। তিনি বলেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যাত্রীরা নিজেরাই টোকেন নিয়ে লাইনে সিরিয়াল তৈরি করেন। দিদারুলের সিরিয়াল ছিল ৪৫। সে সকাল সাড়ে ৮টায় কাউন্টারে পৌঁছাতে পারেন। তাকে জানানো হয় স্নিগ্ধা বা কেবিনের কোনো টিকিট নেই। শুধুমাত্র মার্জিত চেয়ার টিকিট আছে. দিদারুলের প্রশ্ন, আধা ঘণ্টায় সব এসির টিকিট গেল কোথায়?

দিদারুলের ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, রংপুর এক্সপ্রেসে আসন সংখ্যা ৪২৪টি। এর মধ্যে ১১০টি আসন স্নিগ্ধা বা এসি বগিতে। এসি কেবিনে মাত্র ৩৩টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৩টি আসন কোটায় সংরক্ষিত। বাকি ১৪০টি আসনের মধ্যে ৬০টি টিকিট কাউন্টারে এবং ৭০টি অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকিট নিতে পারবেন।

শুধু কাউন্টারেই নয়, অনলাইনেও টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার এক-দুই মিনিটের মধ্যেই সব এসি টিকিট ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়। নুর আলম খান নামের এক যাত্রী জানান, তিনি রংপুরের পীরগাছা যাবেন। তিনি সকাল ৮টায় ই-টিকেটিং ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারলেও একটি আসন নির্বাচন করতে পারেননি। একাধিক ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর তাকে এক মিনিট ৪০ সেকেন্ডের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। পরে লগইন করা যায়নি। আপনি পূর্ববর্তী অনুসন্ধান ইতিহাসের লিঙ্কের মাধ্যমে টিকিট নির্বাচন পৃষ্ঠায় পৌঁছাতে পারেন। কিন্তু এক সময় আসন সংখ্যা একই দেখাচ্ছিল। ৮:৫১ এ স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগইন করুন। কিন্তু ততক্ষণে স্নিগ্ধা ও কেবিনের সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে। সকাল ৮ টায়, তিনি মার্জিত চেয়ারের জন্য টিকিট পেতে সক্ষম হন।

যাত্রীদের অভিযোগ কেন এমন প্রশ্নের জবাবে ফারহাত আহমেদ বলেন, সকালের এক মিনিটে সার্ভারে পাঁচ লাখ হিট হয়েছে। এর মানে ওই সময়ে যাত্রীরা পাঁচ লাখ ডিভাইস থেকে টিকিটের জন্য অনলাইনে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। যাঁদের ইন্টারনেট লাইন দুর্বল, তাঁরা হয়তো ওই সময়ে প্রবেশ করতে পারেননি- এমন দাবি করা সহজ।

তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট বিক্রি চলছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে দেখা যায় মো. ফারুকের সাথে। শুক্রবার সকাল ১১টায় ঢাকা-জামালপুর রুটে তিস্তার কেবিনে চারটি টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াবেন বলে জানান তিনি। লাইনে তার সামনে একজনই ছিল। ফারুক টেলিফোনে বলেন, সকাল ৭টা ৫ মিনিটে তিনি এসি কেবিনের চারটি টিকিট পেয়েছেন।

গতকাল ২৬ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট দেওয়া হয়েছে। আজ রবিবার ২৬ এপ্রিল ট্রেনের টিকিট দেওয়া হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদ উদযাপিত হবে ২ বা ৩ মে। ২৬ এপ্রিল ঈদের আগের শেষ কর্মদিবস। এ কারণে ওই দিন ও ৩০ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

গতকাল বিকাল ৪টায় কমলাপুরে দেখা যায়, বিক্রি শুরুর ১৮ ঘণ্টা আগে থেকে রোববারের টিকিট বিক্রির জন্য প্রায় প্রতিটি কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। তবে দীর্ঘতম লাইন ছিল টিকিটের ৫ নম্বর কাউন্টার অর্থাৎ ‘রংপুর’, ‘লালমনি’ ও ‘কুড়িগ্রাম’ এক্সপ্রেসের। এ সময় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অন্তত তিন থেকে তিন শতাধিক মানুষ। সেহরির আগে এই সংখ্যা ১০ গুণ হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *