জরুরী সেবা পেতেও ২০ মিনিট অপেক্ষা

0

যে কোনো বিপদ বা গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে দ্রুত সাড়া পেতে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস হাতে রয়েছে। ফোন নম্বর ‘৯৯৯’। ফোন করলে ভুক্তভোগী সেবা পাচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ফোন রিসিভ করার সময় থেকেই সমস্যার সমাধান নাকি রেসপন্স টাইম (প্রতিক্রিয়ার সময়)। বর্তমানে, জরুরী সাড়া দেওয়ার গড় সময় ২০ মিনিট। এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অন্তত চার গুণ বেশি। অন্যান্য দেশে, জাতীয় জরুরি সেবা যেমন ৯৯৯ সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের মধ্যে প্রদান করা হয়।

বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হলেও পুলিশকে ফোন করেও সঠিক সময়ে পৌঁছেনি। ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা করেছেন রিয়াজের শ্বশুর, সর্বশেষ চলচ্চিত্র অভিনেতা মহসিন খান। একজন ব্যক্তি লাইভের শুরুতে ৯৯৯ নম্বরে কল করেছিলেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পুলিশের প্রায় ২২ মিনিট সময় লেগে যায়। ১৭ মিনিট লাইভ বক্তব্য রাখেন মহসিন খান। এর মধ্যে পুলিশ পৌঁছালে ঘটনা রোধ করা যেত বলে মনে করছেন অনেকে।

জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশে জরুরি সেবা পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। অন্য দেশে, কলকারী অবিলম্বে একটি জরুরি সেবা কেন্দ্রে চলে যায়। তিনি কোথায় থাকেন তা জানার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাংলাদেশে ৯৯৯ নম্বরে কল করলে ভিকটিমকে জিজ্ঞেস করা হয় তার অবস্থান কোথায়। তার সমস্যার কথা শুনা হয়। ঘটনা ও অবস্থান নিশ্চিত করতে কিছুটা সময় লেগে যায়। তারপর বড় শহরগুলোতে যানজটের সমস্যা রয়েছে। এছাড়া দেশের কোনো থানায় জরুরি সেবার জন্য আলাদা কোনো যানবাহন নেই। পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় থানার দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত থাকেন। এ ছাড়া দেশে অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনায় কোনো নীতিমালা না থাকায় ৯৯৯ নম্বরের সেবা পেতে বিলম্ব হচ্ছে।

এক আধিকারিক জানিয়েছেন, হাসপাতালের চারপাশে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের একটি চক্র ছিল। অনেক ক্ষেত্রে জরুরী সেবা থেকে কল আসার পরও চালক সেই চক্র এড়িয়ে সময়মতো রোগীর কাছে পৌঁছাতে পারেন না। তাকে মানতে হবে সিরিয়াল। এমন নজিরও আছে যে চালক যে সেবাপ্রার্থীর সবচেয়ে কাছের, তাকে খুঁজে না পেয়ে অন্যকে ডাকতে হয়। এটা সময় সাপেক্ষ।

তবে, ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার গতি বাড়ানোর জন্য একটি ‘অ্যাম্বুলেন্স অ্যাপ’ চালু করতে যাচ্ছে, কর্মকর্তা বলেছেন। তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মোবাইলে এই অ্যাপগুলো খোলা থাকবে। চালক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কীভাবে কম সময়ে জরুরি সেবা দেওয়া যায় তা নিয়ে ইতিমধ্যে কিছু কাজ শুরু হয়েছে।

জরুরি সেবা হটলাইনে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ২৮-৩০ হাজার কল আসে ৯৯৯ এ। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার কল জরুরি সেবার জন্য। বাকি কলগুলোতে নানা ধরনের জিজ্ঞাসা থাকে। ২০১৭ সালে এটি চালু হওয়ার পর থেকে, সেবার জন্য ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৩৭টি কল এসেছে৷ এর মধ্যে ৭৮.৮৭ শতাংশ ছিল পুলিশি সেবার জন্য। ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ হয়েছে অগ্নি দুর্ঘটনার পর। ১১.৬২ শতাংশ কল গেছে অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে।

চট্টগ্রামের একটি ঘটনার উদাহরণ দিলেন আরেক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ভিকটিমের অবস্থান মৌখিকভাবে জানা থাকায় সঠিক সময়ে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। বছর দুয়েক আগে চট্টগ্রামের বাটারমোড় এলাকার এক গার্মেন্টস শ্রমিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানান, টিন বখাটে তাকে অনুসরণ করছে। তিনি দ্রুত পুলিশের সহযোগিতা চান। এরপর তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনাটি  ৯৯৯ থেকে স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা তল্লাশির পর নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে আহত গার্মেন্টস কর্মীকে উদ্ধার করা হয়। ততক্ষণে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ফোনকারীর অবস্থান অবিলম্বে জানলে পুলিশ তল্লাশি না করে ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে পারত।

একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পরও ৯৯৯-এর নিজস্ব কোনো অফিস নেই। তারা ঢাকা মেট্রোপলিটন থানায় সাড়ে পাঁচশ জনবল নিয়ে তিন শিফটে কাজ করছেন। কলে উত্তর দেওয়ার জন্য ১০০ জনের বসার ব্যবস্থা।

পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, আমরাও রেসপন্স টাইম কমানোর পরিকল্পনা করছি। অবিলম্বে কল অবস্থান পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *